উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথমদিন গলায় কাছা নিয়ে পরীক্ষা দিতে চলেছে আরামবাগ বয়েজ হাইস্কুলের কলা বিভাগের ছাত্র মলয় পন্ডিত। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এই ছাত্রের উপর দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই মলয়ের দাদু মোহন পন্ডিত অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থ শরীরে রাস্তায় বেরিয়ে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হন। প্রথমে কলকাতার পিজি, পরে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এই পরিস্থিতিতেই প্রায় কুড়ি দিন আগে মলয়ের বাবা সঞ্জয় পন্ডিত পুরশুড়া থেকে বাইক নিয়ে আরামবাগ আসার পথে মারাত্মক দুর্ঘটনায় পড়েন। তাকে প্রথমে শ্রীরামপুর হাসপাতাল, পরে অবস্থার অবনতি হলে কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানে ব্যাসভার অত্যন্ত বেশি হওয়ায় কোন প্রকারে সেখান থেকে তাকে কলকাতায় এক সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রতিবেশি জলিল ও তার বন্ধুরা লোকের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে নার্সিংহোমের কিছুটা খরচ মিটিয়ে সরকারি হাসপাতালে তাকে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে সঞ্জয়বাবু কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। মলয়ের একমাত্র দিদি নার্সিং পরীক্ষা দিতে না পেরে বাবার কাছে কলকাতায়। এই পরিস্থিতিতে কয়েকদিন আগে মোহন পন্ডিত অর্থাৎ মলয়ের দাদু মারা যান। বাবা কলকাতায় ভর্তি থাকায় দাদুর মুখাগ্নি করে একমাত্র নাতি মলয়। আজ দাদুর পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হবে। গলায় কাছা নিয়েই প্রথম দিন পরীক্ষায় বসছে মলয়। পরীক্ষা শেষ করে এসে দাদুর কাজ করবে। বাড়িতে একের পর এক দুর্ঘটনা। পড়াশোনা করার পরিবেশও নেই। তারপরেও অদম্য জেদ মলয়ের সমস্ত প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে পরীক্ষায় ভালো করতে সে বদ্ধপরিকর। একটা বছর নষ্ট হলে পুনরায় একই ক্লাশে খরচ চালানোর মত অবস্থা তাদের নেই। বাবা বাস চালিয়ে সংসার চালাতো। মা লোকের বাড়িতে কাজ করে। এই মুহূর্তে বাবা হাসপাতালে অসুস্থ। অাদৌ সুস্থ হয়ে ফিরে আবার বাস চালাতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। ঠাকুরমা সন্ধ্যা দেবী বলছেন, ছেলে যা রোজগার করত তাতে কোনো রকমে সংসার চলে যেত। কারও কাছে হাত পাততে হতো না।
এখন সব শেষ। নাতি পরীক্ষা দিচ্ছে লোকের কাছ থেকে চেয়ে খাবারের সংস্থান করতে হচ্ছে। মলয় বলছে এই মুহূর্তে সংসার একপ্রকার তলিয়ে গেছে। দিদিও পরীক্ষা দিতে পারল না। সে কোনরকমে পরীক্ষা টুকু অন্তত দিতে চায়। তারপর ভাঙ্গা সংসারকে জোড়া লাগানোর কাজে মন দেবে। এখন দেখার এত প্রতিকূলতাকে প্রতিরোধ করে মলয় তার লক্ষ্যে পৌঁছায় নাকি কালের নিয়মে হারিয়ে যায়।