বিজেপির নেতা থেকে কর্মী সকলেই বেশ গর্ব করে যে কথাগুলো বলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বিজেপি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ একটি দল, এই দলে নাকি সংঘ পরিবারের কাছে আবদ্ধ। বিজেপির তাবর নেতা কিন্তু উঠেছে সংঘ পরিবারের হাত ধরে। যখন থেকে এ রাজ্যে বিজেপি তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করতে শুরু করেছিল তখন থেকেই বিজেপির শীর্ষ নেতারা বারবার বলে ছিলেন দেরি হলেও তারা কোনোভাবেই আদর্শচ্যুত হবেন না। অন্যান্য দল থেকে যারা আসছেন তাদের সকলকে স্বাগত কিন্তু তাদেরো বিজেপির নিয়ম নীতি শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে এবং নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকেই দলে জায়গা করে নিতে হবে। এই নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াটা কি? বিজেপি ঘনিষ্ঠ নেতারা বলেন সংঘের আদর্শের সাথে মতাদর্শগত ভাবে যতক্ষণ না এক হওয়া যায় ততক্ষণ কোন পদ পাবেন না। বাস্তবে মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে সেই চিত্র দেখা গিয়েছিল। মুকুল রায়ের মতো হেভিওয়েট নেতাও ও দীর্ঘদিন ধরেই একপ্রকার পদহীন হয়ে আছেন। অনেকেই মনে করেছিল বামপন্থীরা যেমন গর্ব করে বলেন কোনভাবেই তার আদর্শের সাথে আপোষ করবে না, বিজেপিও তাদের মতো করে তাদের আদর্শকে ধরে রাখবে। কিন্তু রাজ্য কমিটি গঠনের পর বিজেপির তাত্ত্বিক নেতারই এই ধারণা ভেঙে গেছে বলে খবর মিলছে। দীর্ঘদিনের বিজেপি নেতাকর্মীরা বলছে তারা বিজেপি বলতে এতদিন যা জানতো, বর্তমান রাজ্য বিজেপির সাথে তার কোন মিল নেই। কেন এমনটা হল? নারদা কান্ডের প্রধান অভিযুক্তদের দুজন এখন বিজেপি শিবিরে।
এথিকস কমিটির রিপোর্ট এখনো প্রকাশ্যে কেন আসেনি তার কারণ বোধহয় এখানেই লুকিয়ে আছে বলে অনেকে মনে করছেন। তার পরেও এক এক করে চলে এসেছে অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ, নিশীথ প্রামানিক, মাহফুজা খাতুন এর মত তৃণমূল,, সিপিএম ছেড়ে আসা নেতারা। সৌমিত্র খাঁ ভারতবর্ষের একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি কংগ্রেস তৃণমূল এবং বিজেপির যুবর রাজ্য সভাপতি পদে বসেছেন। অর্জুন সিং সংঘ পরিবারের কোন আদর্শের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে চলেন তা নিয়ে অধিকাংশ বিজেপি নেতাকর্মীদের মধ্যে মতভেদ আছে। তার পরেও দেবজিৎ সরকার রাজ্য কমিটিতে স্থান পান না। তৃণমূল ছেড়ে আসা একাধিক অভিযোগে অভিযুক্তরা আজ রাজ্য কমিটিতে আলো করে বসে আছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি ক্ষমতা দখলের নেশাতেই কি বিজেপি আদর্শকে জলাঞ্জলি দিল ?
তাহলে কি বর্তমান বিজেপির কাছে আদর্শ আসলে সোনার পাথর বাটি? বাস্তবে তার কোনো মূল্যই নেই। ক্ষমতা দখলের জন্য, টিকে থাকার লড়াইয়ে থাকার জন্য সব ধরনের দুর্নীতির সাথে আজকের বিজেপি আপস করতে রাজি আছে? এই প্রশ্ন কিন্তু বিজেপির অভ্যন্তরে উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে যারা বিজেপির ঝান্ডা নিয়ে লড়াই করেছে তারা বলছে বিজেপি নেতা কর্মীরা ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। যে তৃণমূলের সাথে লড়াই করার ক্ষেত্র হিসেবে মানুষ বিজেপিকে বেছেছিলো আজ সেই তৃণমূল নেতাদের দলে নিয়ে এসে লড়াই করতে চাইছে বিজেপি। তাহলে তৃণমূলের সাথে বিজেপির বেসিক পার্থক্য কোথায়? পাশাপাশি বামপন্থীরা তাদের চরম দুর্দিনে ও যখন ঋতব্রতর মতো নেতাকে দল থেকে ছেঁটে ফেলতে দ্বিধা করেনি তখন কিন্তু সারোদা নারোদা সহ একাধিক অভিযোগে অভিযুক্তরা দিব্যি বিজেপিতে ঢুকছেন এবং রাজ্য কমিটিতে স্থান পাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি আগামী দিন তৃণমূল আর বিজেপি একসাথে মিশে যাবে? বিজেপি কর্মীরা কিন্তু এ প্রশ্ন তুলছে। রাজ্য কমিটি গঠনের পর এটি অনেকের কাছে পরিষ্কার যে আদর্শ নয় এই মুহূর্তে ক্ষমতা দখলই বিজেপির একমাত্র ও প্রধান লক্ষ্য।