ছত্রধর মাহাতো
রাজ্য

আদৌ করোনা আক্রান্ত ছত্রধর, সিএমওএইচকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ এনআইএয়ের

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় দন্ডিত সাজাতে ইতি টেনে স্বাভাবিক জনজীবনে ফিরেছিলেন জঙ্গলমহলের পরিচিত মুখ ছত্রধর মাহাতো। ছত্রধর মাহাতোর নিহত ভাই শশধর মাহাতো একদা বঙ্গ মাওবাদীদের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন। তাই দক্ষ সংগঠক ছত্রধর মাহাতোর রাজনৈতিক চর্চা বরাবরই তুঙ্গে৷ কারামুক্তির সাথে সাথেই এই রাজ্যের শাসকদলের রাজ্য কমিটিতে জায়গা পান ছত্রধর। তৃণমূলের রাজনৈতিক জীবন সূচনালগ্নেই মাথাচাড়া দিল সেই বাম আমলের মামলাগুলি। এই রাজ্যের শাসক দলের মূল প্রতিপক্ষ যদি বিজেপি সরকারের শাসক দল হয় তাহলে সরকারি এজেন্সিদের অপব্যবহারের অভিযোগ তো উঠবেই। হ্যাঁ যখন বাংলার জঙ্গলমহলে মুকুল -কৈলাস – ভারতীরা হিট সভা সারছেন। তখন জোড়াফুলের সেরা বাজি ভূমিপুত্র ছত্রধর মাহাতো বেকায়দায় এনআইএ মামলায়? এমন পরিস্থিতি প্রকাশ্য সভা সমাবেশ বন্ধ প্রায়। ইতিমধ্যেই কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএ এজলাসে পরপর চারটি আদালত হাজিরাতে গড়হাজির হয়েছেন ছত্রধর মাহাতো। কখনো করোনা পজিটিভ, আবার কখনও বা ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা রুটে আসবার পরিবহন সমস্যা।

সর্বশেষ শারীরিক দুর্বলতার কথা জানিয়ে আদালতে সময় নিচ্ছেন ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবী। তবে আর কতদিন এইরুপ সময় পাবেন ছত্রধর? করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই এনআইএ তাদের স্পেশাল ফোকাস ফেলবে জঙ্গলমহলের ছত্রধর মাহাতোর উপর। বিভিন্ন সুত্রে প্রকাশ, ইতিমধ্যেই সিটি সেশন কোর্টে পরপর চারটি হাজিরাতে গরহাজির থাকার জন্য কড়া ভূমিকা নেওয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। শুক্রবার কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএ এজলাসে ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবী তাঁর মক্কেলের শারীরিক অসুস্থতার জন্য পুনরায় সময় চেয়েছেন পরবর্তী শুনানিতে হাজিরার জন্য। গত শুনানিতে কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএর এজলাসে ছত্রধর মামলার শুনানি চলেছিল। সেখানে ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবী তাঁর মক্কেলের শারীরিক অসুস্থতা এবং ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা আসবার পরিবহণ সমস্যার কথা জানান এজলাসে। সেইসাথে আদালতে হাজিরার জন্য ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময়সীমা চাওয়া হয়েছে ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবীর তরফে। ইতিপূর্বে পরপর আদালতের তিনটি হাজিরা এড়িয়েছেন এনআইএ মামলায় অভিযুক্ত ছত্রধর মাহাতো। যদিও আগেকার হাজিরার সময় ছত্রধর মাহাতোর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট ছিল বলে আদালতে জানানো হয়েছিল। তবে বর্তমানে ছত্রধর মাহাতো করোনামুক্ত। এনআইএর পক্ষে তদন্তে অসহযোগিতার জন্য অভিযুক্ত ছত্রধর মাহাতোর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানানো হয়। এর আগে গৃহবন্দি করার আবেদন জানানো হয়েছিল এনআইএ পক্ষ থেকে । প্রায় একযুগ আগেকার দুটি ফৌজদারি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ পুন তদন্তের নামে অতিসক্রিয় হয়ে উঠে। ইউএপিএ ( রাস্ট্রদ্রোহিতা) মামলায় ফের জরুরি তলব করা হয় ছত্রধর মাহাতোকে। করোনা আবহে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এনআইএ এর এহেন অতিসক্রিয়তা দেখা যায়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতো।সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের ভার্চুয়াল শুনানিতে ছত্রধরের আইনজীবী আবেদনে জানিয়েছিলেন – ” সারাদেশে মারণ ভাইরাস করোনা সংক্রমণ এড়াতে গণপরিবহন একপ্রকার বন্ধ বলা যায়। বিশেষত ট্রেন পুরোপুরি বন্ধ নিত্য যাত্রী পরিবহনে।তাই এনআইএর তদন্তে কলকাতা যাওয়া সম্ভব নয়। শালবনীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা এই দুটি ফৌজদারি মামলার পুন তদন্ত করুক”।

কলকাতা হাইকোর্ট ছত্রধরের এহেন আবেদন কে মান্যতা দিয়ে তদন্তে পূর্ন সহযোগিতা করবার নির্দেশ দেয়। যদিও ছত্রধরের আইনজীবী এই দুটি মামলায় নিস্কৃতি পাবারও আবেদন জানিয়েছিল। তবে সেটি অবশ্য কলকাতা হাইকোর্ট খারিজ করে দেয়। প্রায় এগারো বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালে বিগত বাম জমানায় শালবনিতে জিন্দালদের কারখানার উদঘাটন পরবর্তীতে উত্তপ্ত হয় জঙ্গলমহল। সিপিএমের তরফে বারবার এই কমিটিকে মাওবাদীদের প্রকাশ্য মুখ হিসাবে অভিযোগ তোলা হত। সেসময় জঙ্গলমহলে এক বাম নেতা খুনে ছত্রধর মাহাতো সহ ৩০ জনের নাম জড়ায়। এই মামলায় নিম্ন আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়। অপরদিকে সমসাময়িক ঝাড়গ্রাম সংলগ্ন বাঁশতলা স্টেশনে দিল্লি ভুবনেশ্বর রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক ও সহকারী চালক অপহরণে অভিযোগ উঠে জনসাধারণের কমিটির বিরুদ্ধে। এই ঘটনার মামলাতেও চার্জশিট দাখিল হয় নিম্ন আদালতে। এই দুটি মামলায় প্রথম দিকে জেলা পুলিশ তদন্তকারী হিসাবে থাকলেও পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ তদন্তভার নেয়। কেননা রাস্ট্রদ্রোহিতার ( ইউএপিএ) ধারা রুজু করা হয়। যা এই বাংলায় সর্বপ্রথম কোন ব্যক্তির বক্তির বিরুদ্ধে কার্যকর করা হয় বলে জানা যায়। যদিও ছত্রধরের আইনজীবীরা কলকাতা হাইকোর্টে বিভিন্ন শুনানিতে ইউএপিএ ধারা রুজু করার ক্ষেত্রে যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে তা বেশিরভাগ মানা হয়নি বলে দাবি রেখেছিলেন।

সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের রায়দানে মুক্তি পান ছত্রধর মাহাতো সহ অন্যরা। জেলমুক্তির কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ছত্রধর মাহাতোর রাজনৈতিক সক্রিয়তা দেখা যায়। এই রাজ্যের শাসক দলের রাজ্য কমিটিতে তাঁকে রাখা হয়। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – ‘কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি হয়তো ভেবেছিল হয় ছত্রধর রাজনৈতিকভাবে নিস্ক্রিয় থাকবে নতুবা বঙ্গ গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাবে’। কোনটিই না করে সরাসরি ছত্রধর তৃনমূলের রাজ্য কমিটিতে আসায় ব্যাকফুটে চলে আসে জঙ্গলমহলের বিজেপি। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে অর্থাৎ এপ্রিল মাসে শেষ সপ্তাহে ছত্রধর মাহাতো সহ ২২ জন কে পুন তদন্তের জন্যে দ্রুত কলকাতায় তলব করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ।এই সমন পেয়েই কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন ছত্রধর মাহাতোর আইনজীবী। সেখানে মূল আবেদন এই মামলা দুটি থেকে নিস্কৃতি পাবার উল্লেখ থাকলেও কলকাতার বদলে শালবনীতে তদন্ত প্রক্রিয়া চালাবার আবেদন টি ছিল। করোনা আবহে সমস্ত গণপরিবহণ বিশেষত যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ বলা যায়। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের ভার্চুয়াল শুনানিতে ছত্রধরের মামলায় এনআইএকে শালবনীতে পুনতদন্ত করবার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। এরপরই এই মামলা দুটি পুনরায় চলে আসে কলকাতার সিটি সেশন কোর্টে এনআইএর এজলাসে। এর আগে দুবার নির্ধারিত হাজিরা দেননি এনআইএ মামলায় অভিযুক্ত ছত্রধর মাহাতো।একবার আদালতের সামনে এসেও এজলাস মুখি হননি ছত্রধর মাহাতো। কেননা সেসময় তাঁর করোনা পজিটিভ এর সম্ভাবনা ছিল। পরে রিপোর্টে করোনা পজিটিভ মেলে। আসন্ন বিধানসভার নির্বাচনের প্রাক্কালে বড় ঝড় আনতে চলেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।…

Loading

Leave a Reply