সালিশী সভায় এক মহিলাকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগে শনিবার রাতে দফায়-দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল আরামবাগ। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে থমথমে আরামবাগ। মৃত ওই মহিলার নাম আশরা বেগম। ঘটনাটি আরামবাগের মাধবপুর পঞ্চায়েতের বাঁসুলিচক এলাকায়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে শনিবার রাতে স্থানীয় পঞ্চায়েত মেম্বার কুতুবুদ্দিন মল্লিকের বাড়ির সামনে একটি সালিশি সভা বসে। অভিযোগ সেই সালিশি সভায় মৃত আশরা বেগমের ছেলে আসাদুল ও তার স্বামীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে বিষয়টি জানার পর ওই এলাকায় আসেন আশরা বেগম। মৃতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সালিশি সভায় আসার পর আশরা বেগম কেউ নাকি বেধড়ক মারধর করা হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আশরা বেগমকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মৃতের ছেলে, শেখ আসাদুলের অভিযোগ কয়েক বছর আগে কুতুবুদ্দিন মল্লিকের বাবা বাদল মল্লিক মারা যান। তিনি বাইরে থাকেন। কয়েকদিন আগে বাড়ি ফিরেছেন। বাড়ি ফেরার পর থেকে তিনি অভিযুক্ত না হওয়া সত্বেও তাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তার স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য কুতুবুদ্দিনের ভাই শামসুদ্দিন তাদের বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছিল। প্রায় ১০ দিন গৃহবন্দি ছিল তারা। এমনকি শামসুদ্দীন তার বোনকে জোর করে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তাতে তারা অসম্মতি দেওয়ায় এদিন সালিশি সভায় তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়। তাদের মারধরের কথা জানার পর এলাকায় আসেন তার মা। মা সালিশি সভা এলে তাকে বেধড়ক মারধর করে স্থানীয় পঞ্চায়েত মেম্বার কুতুবউদ্দিন মল্লিক সহ তার দলবল। মুহুর্তের মধ্যে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে তার মা। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সমস্ত সালিশি সভার দায়িত্বে ছিলেন মাধবপুর পঞ্চায়েতের সদস্য কুতুবউদ্দিন ও তার ভাই শামসুদ্দিন মল্লিক বলে সাফ জানালেন মৃত আশরা বেগমের ছেলে শেখ আসাদুল।
যদিও স্থানীয় পঞ্চায়েত মেম্বার কুতুবউদ্দিন মল্লিক সালিশি সভার কথা স্বীকার করে নিয়ে বলেন আশরা বেগম হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারে। তবে সালিশি সভায় তার ছেলে ও স্বামীকে মারধর কথাও তিনি স্বীকার করে নিয়ে বলেন এই ঘটনায় তিনি অবশ্য জড়িত নন। গোটা বিষয়টি পুলিশ দেখেছে।
অন্যদিকে আরামবাগ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কমল কুশারি জানান, বিষয়টি শুনেছি পুলিশ বিষয়টি দেখছে।
এদিনের এই ঘটনা প্রসঙ্গে আরামবাগের বিজেপি নেতা অরবিন্দ সামাজি বলেন, আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের ঐতিহ্য মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা। খুন-খারাপির রাজনীতি তৃণমূল কংগ্রেসের রক্তে রয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের ওপর আস্থা হারিয়ে একজন তৃণমূল পঞ্চায়েত মেম্বার কিভাবে সালিশি সভা বসাতে পারেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অরবিন্দ।
ঘটনার পর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। পাশাপাশি চলছে পুলিশি পিকেট। অন্যদিকে, হাসপাতালে ভর্তি থাকা আশরা বেগমের স্বামীর সাথে কথা বলে সমস্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখছে আরামবাগ থানার পুলিশ।