ছোট্ট মেয়েটির বিয়ে দেওয়ার জন্য একটু একটু করে অর্থ সঞ্চয় করছেন বাবা, অথবা ছেলের উচ্চ শিক্ষার কথা চিন্তা করে অর্থ জমিয়ে রাখছেন পিতা। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভারতের মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষের ভরসাস্থল ছিল ভারতীয় জীবন বিমা নিগম (এলআইসি)। আজও প্রতি ভারতবাসীর ঘরে ঢুঁ মারলে একটি হলেও এলআইসির পলিসি মিলবে। ১৯৫৬ সালে তৈরি হওয়া এই জীবনবিমা সংস্থার সঙ্গে আপামর ভারতবাসীর সম্পর্ক সত্যিই খুবই গভীর, খানিকটা আত্মিকও বলা যায়। এলআইসির উপর মানুষের অগাধ ভরসার কারণ একটাই এর ১০০ শতাংশ শেয়ারই সরকারের। তাই এলআইসির কোনও একটি পলিসিকে ঘিরেই সাধারণ মধ্যবৃত্ত মানুষ তাঁর ভবিষ্যতের সপ্নের জাল বুনে রেখেছেন।
কিন্তু শনিবারের বাজেট পেশের পরই যেন এক ঝটায় এলোমেলো করে দিয়েছে কোনও কন্যাগ্রস্ত পিতার স্বপ্ন বা ছেলেকে উচ্চশিক্ষায় অবতীর্ন করার আকাঙ্খায় থাকা বাবার ইচ্ছাশক্তিকে। এলআইসির শেয়ার বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত যেন টলিয়ে দিয়েছে গোটা দেশের মধ্যবিত্ত সাধারণ নাগরিককে। এলআইসির ১০০ শতাংশ বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত ফের সারদা, রোজভ্যালির মতো চিটফান্ডের স্মৃতিকে নতুন করে উস্কে দিয়েছে। শনিবার বাজেটে এলআইসির শেয়ার বিক্রির ঘোষণার পরই, অনেকেই খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছেন কীভাবে এলআইসিতে জমানো টাকা তুলে নেওয়া যায়। কারণ এতদিনের এলআইসির প্রতি অগাধ বিশ্বাসে চিড় ধরিয়ে দিয়েছে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা। মানুষের এই আশঙ্কা অবশ্য একেবারেই অমূলক বলা যাবে না। কারণ এলআইসি বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পর সেই বেসরকারি সংস্থা যে আচমকা পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যাবে না তার গ্যারান্টি কিন্তু সরকার এখনই দিতে পারবে না।
কয়েক বছর আগেই সারদা-রোজভ্যালির মতো একাধিক চিটফান্ডের কারণে কত মানুষের আত্মহত্যা, কত পরিবারের চোখের জল দেখে ছিল গোটা ভারতবর্ষ। এলআইসির বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের মনে সেই স্মৃতি নতুন করে ফিরে আসছে। আরও এক সরকারি লাভজনক সংস্থার শেয়ার বিক্রি নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে যে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ বিক্রি করে আর কতদিন সংসার চালাবে এই সরকার? ইতিমধ্যেই ভারতজুড়ে এলআইসির এজেন্টরা আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এমনিতেই দেশের অর্থনীতির কঙ্কালসার চেহারা, মূল্যবৃদ্ধি, সিএএ ও এনআরসি ইস্যুতে আন্দোলনের জেরে উত্তাল রয়েছে ভারতবর্ষ। এবার কি তাহলে আরও এক আন্দোলন সংযোজন হতে চলেছে? উঠছে সেই প্রশ্নই।