১৯৫৬সালের ১সেপ্টেম্বর থেকে ৬৩বছর ধরে চলে আসা ভারতবাসীর অর্থলগ্নির দিশা LIC-এর শেয়ার বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সাধারণ বাজেটে আইডিবিআই এবং এলআইসির শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিল সরকার। মোদি সরকারের দ্বিতীয় দফায় সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট ছিল এটি। বিলগ্নিকরণ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দাবি শেয়ার বাজার দেশের অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। আর সে জন্যই দেশের তথা বিশ্বের প্রথম সারির বিমা সংস্থা এলআইসিকে বিক্রির চিন্তা ভাবনা করেন অর্থমন্ত্রক। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেখানে রাজ্যগুলির মতামত দিয়ে এলআইসি বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অংশীদারিত্ব বিক্রি করে ২২.৬ লক্ষ কোটি টাকা আয় হবে। এলআইসিতে আশানুরূপ আয় না হওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের। এলআইসিতে মোট ৩১ লক্ষ ১১ হাজার কোটি টাকা আছে। পলিসি গ্রাহক আছে ২৯ কোটি। বিশ্বের এক নম্বর বিমা সংস্থা হল এলআইসি।
এলআইসির কর্মসংস্থান ১ লক্ষ ১২ হাজার। এজেন্ট সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৯ হাজার। গত বছরে এলআইসির লাভ ছিল ২৩ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা। শেষ পাঁচ মাসে পলিসি বিক্রি হয়েছে ৬৭ লক্ষ ৮৬ হাজার ২১০ টি। ১৯৫৬ র ৩৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী রসিদে লেখা আছে প্রতিটি পলিসির সমস্ত টাকা ফেরত দেওয়ার গ্যারান্টি সরকারের। তবে শেয়ার বিক্রি হয়ে গেলে সরকারের কোনও দায়িত্ব থাকবে না। এলআইসির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ যায় দেশের উন্নয়নে এবং ৯৫ শতাংশ পলিসি হোল্ডারদের বোনাসে।এছাড়া ৭৪ শতাংশ সরকারি বন্ড বা সিকিউরিটিতে নিরাপদ খাতে বিনিয়োগ হয়ে থাকে। বাকি ২৬ শতাংশ টাকা রাজ্য সরকারকে ও শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়। এল অাই সির এই দুরবস্থার জন্য উঠে এসেছে সরকারের কতগুলি ভুল পদক্ষেপ।অনেকে মনে করেন আইডিবিআই এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক লোকসানের মুখে চলা এই দুটি ব্যাংকের শেয়ার কেনার জন্যই এলআইসির এই পরিণতি। তবে গ্রাহকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত চিন্তায় পড়েছেন তারা। গ্রাহকরা বলছেন সরকারের এই অবস্থানে এলআইসির কী পরিণতি হবে তা আমরা জানি না। তারা এও জানিয়েছেন আমরা যখন বীমা করি তখন সরকারের হস্তক্ষেপের কথা চিন্তা করেই বিমা করেছিলাম।
কিন্তু এখন সরকার এলআইসির উপর থেকে হাত সরিয়ে নিচ্ছে। তবে বিমার অবস্থান কী হবে তা নিয়ে আমরা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার মুখে পড়েছি। এলআইসি কর্তৃপক্ষ এই শেয়ার বিক্রির ব্যাপারে গ্রাহকদের চিন্তা কিভাবে দূর করবেন তারও কোন সমাধান মেলেনি। এলআইসি এজেন্ট এবং কর্মচারীরাও এখন তাদের অবস্থান এবং কর্মসংস্থান নিয়ে দুশ্চিন্তার মুখে পরেছেন। তবে অনেকে বলছেন ভারতের অর্থনীতিতে যেভাবে ধ্বংস নেমেছে এলআইসির শেয়ার বিক্রি তারই ফল।