ফিচার

কফিনে মোড়ানো বৈশাখ!

ঋদি হক, ঢাকা :- নিকট অতীতে এমন দুনিয়া কাঁপানো ভয়াবহ মহামারির কথা মনে পড়ে ? যে মাহামারির আতঙ্কে উপাসনালয়ের দরজা বন্ধ হয়ে যায়! ভয়-আতঙ্কের মিশেলে প্রাণে বাচতে ঘরের বাইরে পা রাখতে পারে না মানুষ! মনে পড়ে গোটা দুনিয়ার মানুষ প্রাণ ভয়ে আজ ঘরবন্দি! স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো পৃথিবীর জনপদ। দুনিয়ার সকল প্রান্ত থেকে একটাই আওয়াজ বাচতে হলে ঘরে থাকুন!! কোনটা বন্ধ হয়নি, আর কোনটা বন্ধ হবার বাকী রয়েছে তা কি করে বলবো? আপনার কি জানা আছে? মানবসভ্যতা বিধ্বংসী বর্তমান মহামারি করোনাভাইরাস! যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংস্কার কোভিড-১৯! যার কবল থেকে মানুষকে রক্ষায় পথঘাট, হাটবাজার, জনপদ সবই আজ ফাঁকা। কোথাও জনসমাগম নেই। মানুষকে রক্ষার জন্য কার্ফুজারি জারি করা হয়েছে, এমন ভয়ানক ইতিহাস বোধ হয় অজানা।



পৃথিবীতে যুগে যুগে বহু মহামারি দেখা দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে। ইতিহাস বলছে, খ্রিষ্টপূর্ব ৪৩০ অব্দে স্পার্টানদের সাথে গ্রিকদের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দ্য প্লেগ অব এথেন্স নামের মহামারীই পৃথিবীর প্রথম প্লেগ রোগ। এতে হাজার হাজার গ্রিক সৈন্য মারা যায়।
এ মহামারীতে ঠিক কতজন মানুষ মারা গিয়েছিল, তা-ও জানা সম্ভব নয়। আক্ষরিক অর্থে, এথেন্সের প্রাচীন মহামারী সম্পর্কে তটুকু জানা যায়, তার সবটুকুই গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডাইডসের হিস্ট্রি অব দ্য পেলোপনেসিয়ান ওয়্যার থেকে পাওয়া। কারণ তিনি ভয়ংকর প্লেগের স্বাক্ষী! যা গ্রামের পর গ্রাম জনশূন্য করে দিয়েছিল। পরবর্তীতে দ্য গ্রেট প্লেগ অব লন্ডন হিসেবে স্বীকৃত ১৩৩৪ সালের প্লেগ রোগটির উৎপত্তি চীন থেকে। এরপর ইতালির ফ্লোরেন্স শহরেই ছয় মাসে প্লেগে মারা যায় ৯০ হাজার মানুষ। পুরো ইউরোপজুড়ে মারা যায় আড়াই কোটি মানুষ। এমনি আলোচিত বহু মহামারি ইতিহাস থাকলেও সর্বশেষ করোনাভাইরাসের মতো এমন ভয়ঙ্কর ইতিহাস নেই। যার আতঙ্কে গোটা দুনিয়া আজ স্তব্ধ! এ অবস্থায় বাঙলাদেশেও জনসমাগম এবং অনুষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়িতে বসেই নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করার আহবান জানিয়েছেন দেশবাসিকে। বিশিষ্ট বরীন্দ্র গবেষক, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সংবাদকর্মী ওয়াহিদুল হক ১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত সূর্যোদয় থেকে রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখ স্বাগত জানিয়ে প্রভাতি অনুষ্ঠানের শুরু করেছিলেন। অনুষ্ঠানটি সর্বমহলে প্রশংসিত। ১৯৭১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর এবারই করোনাভাইরাস দ্বিতীয়বারের মতো পর্দা টেনে দিলো।


করোনাভাইরাসের কাছে পৃথিবী যখন বন্দি, মৃতদেহ সৎকারে যখন কাউকে পাওয়া যায় না, ঠিক এমন সময়ে বাঙালির দরজায় কড়া নাড়ে পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বাঙলা নববর্ষ। প্রাণ বাচানোর তাগিদে বাঙালির যখন ঘরবন্দি দিনযাপন, তখন বাঙলা নববর্ষের কড়ানাড়ার শব্দে ভীত-সন্ত্রস্ত জাতি। নিরাবরন এমন বাঙলার মুখ কখনও দেখেছেন আপনি? এ অবস্থায় ঘরবন্দি পরিবারকে নিয়ে আপনার হৃদয়ে কি রক্তক্ষরণ হয় না? আমরা কবে প্রাণ খুলে গাইতে পারবো ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো—মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ একথা মনে করে চোখের জল ফেলা ছাড়া যে আমাদের সামনে আর কোন পথ নেই। কফিনে মোড়ানো বৈশাখের জন্য আমাদের প্রার্থনা, ফি বার তুমি এসো, ‘যদি সময় পাই’ আমরা তোমায় প্রাণ খুলে আঙ্গিন করবো। আর পুব আকাশে উদীত প্রত্যুষ্যের ঘুম ভাঙ্গিয়ে সমবেত কন্ঠে তোমায় আহ্বান জানাবো ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো—মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’


Loading

Leave a Reply