জেলা

করোনার জেরে নিজভূমে পরবাসী ডুয়ার্স ফেরত কাটোয়ার ব্যবসায়ী, কাছে ঘেঁষছেন না স্ত্রী

ডুয়ার্স থেকে ভ্রমণ সেরে ফেরা কাটোয়ার স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দাকে করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে বাড়িতে কার্যত একঘরে করে রেখেছেন স্ত্রী। বাড়ির এককোণে একটি ছোটো ঘরে তাঁকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তাঁর কাছে ঘেঁষছেন না স্ত্রী। জানালা দিয়ে তাঁকে খাবার দিচ্ছেন। এমনকী নিজের এঁটো বাসনপত্র তিনি নিজেই ধোয়ার কাজ করছেন।

কাটোয়া শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী অরুণ কুমার মণ্ডল ৬ মার্চ ডুয়ার্স, কার্শিয়াং, গ্যাংটক প্রভৃতি জায়গায় একাই বেড়াতে গিয়েছিলেন। তারপর সেখানে টানা ছ’দিন কাটিয়ে ১৩ মার্চ কাটোয়া শহরে নিজের বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফেরা মাত্রই স্ত্রী কল্পনা মণ্ডল সটান দরজা বন্ধ করে দেন। স্বামীকে বাড়িতে তিনি কিছুতেই ঢুকতে দেবেন না। তার কারণ স্বামীর করোনার পরীক্ষা না করে বাড়িতে আসতে আপত্তি তোলেন স্ত্রী। শত অনুরোধ করে স্ত্রীকে বোঝালেও কল্পনাদেবী রাজি হননি। অগত্যা অরুণবাবু কাটোয়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে সটান চলে যান কলকাতায় বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। সেখানে গিয়ে চিকিৎসক থেকে নার্স প্রত্যেকেই অনুরোধ জানান যে তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য। তা নাহলে তাঁকে তাঁর স্ত্রী বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না। প্রথম দিকে বেলেঘাটা হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে নার্স প্রত্যেকেই ব্যবসায়ী অরুণবাবুকে বোঝান। তাতেও কাজ হয়নি।

তারপর তিনি বেলেঘাটা হাসপাতালের কর্মীদের জানান যে, তাঁকে যদি পরীক্ষা না করানো হয় তাহলে তিনি দিদিকে বলোতে ফোন করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানাবেন।
শেষমেশ ওই ব্যবসায়ীর কথামতো তাঁর রক্তপরীক্ষা করানো হয়। পুরো তথ্য হাসপাতালের কাগজে লিখে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকরা তাঁকে আশ্বস্ত করেন যে, তাঁর শরীরে করোনা ভাইরাস নেই। তারপর তিনি বেলেঘাটা হাসপাতালের দেওয়া কাগজ এবং বেশ কয়েকটি এন-৯৫ মাস্ক কিনে কাটোয়া শহরে বাড়ি ফিরে আসেন। তারপর বাড়িতে এসেও তাঁর মনে শান্তি নেই। সারাক্ষণ মনে করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তারপর স্ত্রীর কথামতো তিনি ঠিক করলেন অন্তত ১৪ দিন আলাদা থাকবেন। সেইমতো দোতলা বাড়ির নীচের তলার কোনের ছোট্ট ঘরে আলাদা থাকতে শুরু করেন।

স্ত্রী কল্পনা মণ্ডল বলেন, চারিদিকে শুনছি করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছে। তাই স্বামী বেড়িয়ে আসার পর বাড়িতে ঢুকতে দিইনি। বলেছি আগে রক্তপরীক্ষা করে দেখাও তোমার করোনা ভাইরাস হয়নি। তারপর বাড়িতে ঢুকতে দেব। তারপর হাসপাতালের কাগজপত্র দেখিয়েছে আমাকে। এখন নিশ্চিত যে আমার স্বামীর করোনা ভাইরাস নেই। তাও চিকিৎসক যেহেতু বলেছেন আলাদা থাকতে। তাই কিছুদিন আলাদা থাকছেন। অরুণবাবু বলেন, তবে বেলেঘাটা হাসপাতালের চিকিৎসক আমাকে বলেছেন যে আমার করোনা হয়নি। তবে কিছুদিন আলাদা থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই নিজের সুরক্ষার জন্যই আলাদা থাকছি। জানালার ফাঁক দিয়ে খাবার দেওয়া হচ্ছে।

অরুন বাবু সারাদিন ব্যবসার কাজে দোকানে থাকলেও দুপুরে এবং রাতে বাড়িতে ফিরে এসে ওই ছোট্ট ঘরেই একা থাকেন। স্ত্রী কল্পনাদেবী ঘরের জানলার ফাঁক দিয়ে দু’বেলা খাবার দেন। এমনকী এঁটো বাসনপত্র নিজেই ধুয়ে আলাদা রাখেন ব্যবসায়ী। নিজের জামা কাপড় বাড়ির অন্যান্যদের সঙ্গে রাখছেন না। সবসময় দূরে দূরে থাকছেন। নিজেই চা তৈরি করে খাচ্ছেন। তিনি বলেন, চারিদিকে যা হচ্ছে তাতে নিজে সচেতন থাকলে দোষ কোথায়। আর বেলেঘাটার চিকিৎসকরা তো বলেইছেন ১৪ দিন আলাদা থাকতে। যদি কিছু ঘটে এরমধ্যেই ঘটবে। তাই নিজে সতর্ক আছি।

Loading

Leave a Reply