রাজ্য

করোনার দাপটে বহু ঐহিত্যবাহী রথযাত্রা এবার ফিকে, মাসির বাড়ির আদর থেকে বঞ্চিত জগন্নাথদেব

করোনার দাপটে বাঙালির অন্যতম আবেগঘন উৎসব রথযাত্রা এবার সর্বত্রই। রাজ্যজুড়ে বন্ধ বহু ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন রথযাত্রা উৎসব। নবদ্বীপের ইস্কন, শ্রীরামপুরের মাহেশ থেকে মহিষাদল, দুর্গাপুর থেকে রানিগঞ্জ, আসানসোল, কুলটি, বর্ধমান, কাটোয়া, কালনা, দিগনগর সর্বত্র বন্ধ রথের মেলা। রথের দড়িতে টান দেওয়াও সুযোগও সেভাবে পাবেননা জগন্নাথদেবের ভক্তরা। রথ দূরে নিয়ে যাওয়ার বিধি নিষেধ থাকায় উদ্যোক্তারা পাশেই গড়ে তুলছেন অস্থায়ী মাসির বাড়ি। মারণ ভাইরাস প্রভু জগন্নাথ দেবেও মাসির বাড়ির স্থান পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষকে উৎসব থেকে বঞ্চিত করল। রথের মেলায় অংশ নিতে না পারায় একদিকে যেমন ক্ষতির মুখে মেলা ব্যবসায়ীরা তেমনি মুখভার শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদেরও। অনেক জায়গাতেই এবার মাসির বাড়ির আদর থেকে বঞ্চিত জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা।

স্টিল সিটি দুর্গাপুরে মানুষ প্রতি বছর রথের উৎসবে মাতোয়ারা হয়।সাম্প্রতিককালগুলিতে দুটি বৃহৎ রথযাত্রার সাক্ষী থেকেছে এই আধুনিক শহর। চিত্রালয়ের মাঠে বসা রথের মেলার পরিচিতি শুরু দুর্গাপুর নয় বাঁকুড়া, বীরভূম সহ বহু জায়গায় রয়েছে। ভিন জেলা থেকে মানুষ এই বিশাল মেলা দেখতে আসত। তবে মেলার পাশাপাশি ভক্তদের ভিড়ে গমগম করত এলাকা। জগন্নাথ মন্দির থেকে রথযাত্রা উৎসব সমাজ কল্যাণ সমিতির রথ গিয়ে থামত চিত্রালয়ের মাঠে অস্থায়ী মাসির বাড়িতে সেখানেই চলত উৎসব। মেলার পাশাপাশি কীর্তন, বাউল কবিগানের লড়াই, যাত্রা, যোগ ব্যয়াম প্রদর্শণী। উল্টো রথের দিন জগন্নাথ, বলরাম সুভদ্রা ফিরে গেলেও মেলা চলত ১২ দিন ধরে। এবার সবই অতীত। জগন্নাথ মন্দির চত্বরেও অস্থায়ী মাসির বাড়িতে উঠবেন ঠাকুর। সেখানে থেকে উল্টো রথে তারা ফিরে যাবেন মন্দিরে। একইভাবে দুর্গাপুরে ইস্কন মন্দির থেকে রথ বেরিয়ে আসত সিটিসেন্টারের চতুরঙ্গ মাঠে। সেখানে বসত মেলা, চলত উৎসব। কিন্তু সেখানেও ছেদ। এবার মন্দিরের পাশেই অস্থায়ী মাসির বাড়িতে রাখা হবে জগন্নাথদেবদের। ভক্তরা সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে দর্শন পাবেন। অন্যদিকে শ্রীরামপুরের মাহেশ থেকে ইস্কন সর্বত্রই উৎসবে ভাটা পড়েছে। তাই এই বিশেষ দিনে উৎসবপ্রিয় বাঙালি একপ্রকার হতাশ।

অন্যদিকে, ১৮৪ বছরের পুরোনা রথযাত্রার ইতিহাস রয়েছে রানিগঞ্জের। রানিগঞ্জের সিয়ারশোলে রাজবাড়ির রথ এলাকায় যথেষ্ট প্রষিদ্ধ। এখানেও রথযাত্রা উপলক্ষে বড় রথের মেলা বসে। এই মেলা ও উৎসব এলাকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনে বড় ভূমিকা নেয়। আগে রাজারাই পুরো উৎসবের আয়োজন করলেও এখন সিয়ারসোল স্পোটর্স অ্যান্ড ক্যালচারাল অ্যাসোসিয়েশন এর মুখ্য ভূমিকা নেয়। তাদের দাবি, প্রায় ২০০ বেশি দোকান মেলায় বসত। রথ নতুন রাজবাড়ি থেকে পুরনো রাজবাড়িতে যেত। উল্টো রথে তা আবার নতুন রাজবাড়িতে ফিরে। সম্পূর্ণ পিতলের তৈরি এই রথ। এখানে রথে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রর পরিবর্তে রাজাদের কূলদেবতা দামোদর চন্দ্র রথে উঠেন। তবে এবার তা হচ্ছে না। নতুন রাজবাড়িতেই থাকবে রথ, মন্দির থেকে সেখানেই উঠবেন দেবতা।

পুজোর পর ফের ফিরে যাবেন মন্দিরে। রাজপরিবার, আয়োজন অ্যাসোসিয়েশন ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। মেলাও বসতে দেওয়া হচ্ছে না। আসানসোলের ইস্কনের রথযাত্রাও এবার হচ্ছে না। রথযাত্রা থেকে বঞ্চিত হবে বরাকর, কুলটিও। বরাকরে সীতারামবাবা প্রতিষ্ঠিত গৌরাঙ্গ মন্দিরের রথ বাইরে বের হবে না। রথ যাত্রা উপলক্ষে মেলাও স্থগিত। রথের উৎসব হচ্ছে না কুলটির শিমুলগ্রামেও। মন্দির চত্বরেই জগন্নাথদেবদের পুজো হবে প্রথা মেনে। একই ভাবে বার্নপুর ও জামুড়িয়াতেও রথের উৎসবে ছেদ পড়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রথে প্রচুর পর্যটক সমাগম হতো যদিও এবার সবকিছুই থাকছে বন্ধ।

Loading

Leave a Reply