ফিচার

করোনা সংক্রমণের গুজবে নির্বিচারে বাদুড় হত্যা

মানুষের আধুনিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে যে, বেড়ে উঠেছে কুসংস্কার এবং গুজব তা হয়তো করোনাভাইরাস না এলে বোঝা যেত না। করোনা ভাইরাস নাকি বাদুরের শরীর থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। হঠাৎ করে এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্বেজুরে। গোবেচারা ভুতুড়ে প্রকৃতির এই বাদুরই এখন অস্থিত্ব বিলুপ্তির পথে। কখনো বাদুর দেখলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে কখোনো খাবারে বিষ দেওয়া হচ্ছে। যেনতেন প্রকারেণ বাদুরকে পৃথিবী থেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য উদ্ধত হয়েছে মানুষ। যে নিরীহ গোবেচারা প্রাণীটি হঠাৎ করেই মানুষের অজান্তে ভুতুড়ে হয়ে উঠেছিল, আর এবার সেই বাদুড় নিজের অজান্তেই কখন মানুষের অস্তিত্ব বিলুপ্তির কারণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু আদৌ কি বাদুরের কোন দোষ আছে? পরিবেশ বীদ থেকে বিজ্ঞানীরা সবাই কিন্তু বলছেন অন্যকথা। সকলেই জানিয়েছেন বাদুরের শরীর থেকে কোনভাবেই করোনা মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে না। যেমন সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু মোরগ বা পাখির শরীর থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করছিল। ঠিক সেরকম কোনো ব্যাপার ঘটেনি বাদুড়ের ক্ষেত্রে।এমন কোনো তথ্য এখনো মেলেনি। চীনের মানুষ বাদুরের মাংস খেয়ে সংক্রমিত হয়েছে এমন গুজব রটে বিশ্বে। অার তা থেকেই নাকি বলা হয় বাদুরের শরীর থেকে করনা সংক্রমিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাদুড়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর দেখা গেছে বাদুড়ের শরীরে কোনো রকম কোনো করোনা ভাইরাস নেই। এমনকি বাদুড়ের শরীরে যে ভাইরাস পাওয়া গেছে সে ভাইরাসের সাথে করোনা ভাইরাসের মিল নেই। তবে নির্বোধ মানুষগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার চক্করে পড়ে গুজবে কান দিয়ে কেন প্রাণীগুলোকে হত্যা করছে? এশিয়ার বেশকিছু পরিবেশবিদ এই প্রনীটিকে হত্যা করার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এশিয়ার ছটি দেশের ৬৪ জন বাদুর বিশেষজ্ঞ, এবং পরিবেশ আন্দোলনকারী বিশেষজ্ঞরা এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানান বাদুর দেখলেই এই অবলা জীব গুলোকে দয়াকরে মারবেন না। এমনকি তারা এ-ও বলেন কোথাও কোনো রকম কোনো প্রমাণ মেলেনি যে বাদুর করোনা ছড়িয়েছে। সোশ্যল মিডিয়ার গুজবে কান দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবেন না। বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই প্রনীটি। কৃষি কাজের ক্ষেত্রেও বাদুরের অবস্থান অনস্বীকার্য। জানা গেছে মালিবুদ্বীপে বাদুড়ের সুপ খাওয়ার একটি ছবি ইউহানের বাজারে বিক্রী হওয়া সুপ বলে ছড়িয়ে পড়ে। আর তারপরেই শুরু হয়ে যায় অহেতুক বাদুর কে দোষারোপ করার কাজ। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পরই শুরু হয় বাদুর নিধন।



ভুতের বাহন বানানো বাদুড় অদৃষ্টের কারণে আজ অস্তিত্ব বিলুপ্তির পথে। হঠাৎ করেই বাদুরকে ভুতের বাহন বানিয়ে দেওয়া হয়। কখনো সিনেমা, কখনো ভৌতিক গল্প সবেতেই বাদুরকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। কিন্তু তাতেও বাদুড়ের কোনো দোষ ছিল বলে মনে হয় না। আর এবার অহেতুক সমগ্র বিশ্ববাসীর শরীরের মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর দায়ে চেপে গেল বাদুড়ের উপর। তার জেরে বাদুর দেখলেই তাকে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অথবা মেরে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু আদৌ কি আমরা একবার ভেবে দেখেছিলাম যে বাদুর সত্যি করোনা রোগ বহন করে কিনা! বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন বাদুড়ের শরীরে করোনা ভাইরাসের মতো ভাইরাস দেখা গেছে। কিন্তু তা বলে বাদুরই যে ভাইরাস ছড়িয়েছে সেটা কখনোই প্রমাণিত হয়নি। তাই দয়া করে বাদুর দেখলেই পরিবেশের বাস্তুতন্ত্র নষ্ট করার জন্য বাদুরকে হত্যা করবেন না। এমনটাই আবেদন জানালেন পরিবেশবিদরা। এশিয়ার ৬ টি দেশের ৬৪ জন বাদুড় বিশেষজ্ঞ জানালেন সার্স কভ টু এর উৎস এখনো অজানা। এটা খুবই দুঃখজনক যে বাদুরকে কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চে সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে বাদুড় থেকে করোনা ছড়ানোর কোনও প্রমাণ মেলেনি। বাদুরের দেহে যে ভাইরাস পাওয়া গেছে তা কভিট ১৯ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বন্যপ্রাণীর বাজার বন্ধ করা হোক বা অন্য কোন প্রাণীকে বিনা কারণে হত্যা করা বন্ধ করা হোক।




গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে হঠাৎ করে বাদুরের শরীর থেকে কোন ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। গবেষণায় এটাও পাওয়া যায়নি যে বাদুরের শরীর থেকেই করোনা ছড়িয়েছে। চাষের কাজে বাদুরের বাস্তুতন্ত্র অত্যন্ত জরুরী। এমনকি মানুষকে সুস্থ রাখতেও বাদুরের বাস্তুতন্ত্র দরকারি। বাদুর নিয়ে কোনো রকম কোনো বিবৃতি দেওয়ার আগে অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে এই ছোট্ট প্রাণীটিকে আপনার একটি ছোট্ট বিবৃতি বিলুপ্ত করতে ইন্ধন যোগাতে পারে। তাই সমস্ত দিক বিবেচনা করে একটু ভেবে দেখুন আর বাদুর নিধনযজ্ঞ বন্ধ করুন। কখনো বাদুরকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, কখনো বা বাদুড়ের বাসায় খাবারের সাথে বিষ দেওয়া হচ্ছে। তাই দয়া করে বাদুর হত্যা বন্ধ করুন। নিজের মানব চক্ষু উন্মিলিত করুন।



Loading

Leave a Reply