ফিচার

কিছুতেই টাকা সঞ্চয় করতে পারছেন না? এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি অবশ্যই অনেক টাকা জমাতে পারবেন।

কিছুতেই টাকা জমাতে পারছেন না? ইচ্ছে সত্বেও সমস্ত টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে? এই সমস্যা শুধু আপনার নয়, অনেকেরই এই সমস্যা। আসল ব্যাপারটা হলো আমরা কিছু ভাবনা চিন্তা না করে অর্থ ব্যয় করে ফেলি। আমরা যেকোন সিদ্ধান্ত চট করে নিয়ে ফেলি। সমস্ত সিদ্ধান্ত একটু ভাবনা চিন্তা করার পরে নিলে লাভবান হবেন। টাকা পয়সা জমা হোক বা যে কোন ক্ষেত্রে চিন্তা করে সিধান্ত নেওয়া উচিত। যেমন জুতো আবিষ্কার গল্পের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি রাজার খালিপায়ে অসুবিধার জন্য রাজা আদেশ দেন সমস্ত রাস্তা চামড়ার বানিয়ে দিতে। তিনি ভেবে দেখেননি তিনি পায়ে যদি চামড়ার জুতো জাতীয় কিছু ব্যবহার করেন তাহলে তার পায়ে কষ্ট হবে না। কম খরচেই লাভবান হবেন। ঠিক সেরকমই যেকোন সিদ্ধান্ত আমাদের চিন্তা করে নেওয়া দরকার। তাহলে আমরা অহেতুক টাকা খরচ করব না। টাকা জমাতে পারব। অনেকেই মনে করেন টাকা জমানোর একটা শিল্প। হাতে টাকা থাকলে সহজে খরচ করতে তো সকলেই পাড়ে। কিন্তু একটু ভাবনা-চিন্তা করে টাকা খরচ করতে খুব কম মানুষই পারে।

প্রথমত, আপনাকে যেটা করতে হবে, একটি জমা খরচের হিসাব পত্র নিতে হবে। সেখানে আপনি কোন খাতে কত টাকা খরচ করবেন তা মাস শুরুর আগেই লিখে রাখুন। আমেরিকান ম্যানেজমেন্ট এন্ড কনসালটেন্টএর এক বিখ্যাত ব্যাক্তি এবং লেখক, পিটার ড্রাকার বলেন” যদি তুমি পরিমাপ করতে না পারো তাহলে তুমি পরিচালনা ও করতে পারবে না।” সে কারণেই বেহিসাবি খরচা করা বন্ধ করুন।
দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র কেনাকাটা বন্ধ করুন। একেবারে এক সপ্তাহ বা একমাসের কেনাকাটা করলে দাম একটু সস্তা হয় তাই আপনি একটু লাভবান হবেন।
তৃতীয়তঃ পিগি ব্যাংক ব্যবহার করুন। সাধারণত খুচরো টাকা পয়সা গুলো আমরা এদিক-সেদিক সরিয়ে রাখি। সে দিকে অতটা নজর রাখে নি। সে কারণে ঐ সমস্ত টাকা-পয়সা গুলিকে একটি ছোট বোকাভাঁড়ের মধ্যে জমা করে রাখলে বছরের শেষে দেখবেন ওই টাকা পয়সা গুলো বেশ কিছুটা জমা হয়েছে। তাই প্রতিদিন কেনাকাটার শেষে বাড়ি ফিরে খুচরো টাকা গুলো একটি পিগি ব্যাংক এর মধ্যে জমা করুন।

চতুর্থত, এখন কোন জিনিস কিনতে গেলে আমরা অনলাইন কে সুবিধা হিসেবে ভেবে নিই। কিন্তু অনলাইনে জিনিস কেনার আগে সেই জিনিসটি বাজারে কত দর তা জেনে নিন। তারপর সুবিধামতো অনলাইনে কেনাকাটা করুন। তবে অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে বাজারদরের সাথে যাচাই করে কেনাকাটা করাই শ্রেয়। এছাড়াও একটি জিনিস কিনতে গেলে বিভিন্ন শপিং এর সাইট গুলোতে খুঁজে দেখুন যেখানে সস্তা হবে সেখানেই কিনুন। তাতে অনেকটা টাকা সেভ হবে।
পঞ্চমত, ব্যাংকে সেভিংস একাউন্ট এর সাথে ডিপোজিট একাউন্ট খুলে রাখুন। ডিপোজিট একাউন্টে অল্প কিছু অ্যামাউন্ট ডিপোজিট করে রাখুন। যাতে আপনি ভুলে গেলেও আপনার সেভিংস একাউন্ট থেকে সেই টাকা প্রতি মাসে জমা হতে থাকে ডিপোজিট একাউন্টে। তাই এক্ষেত্রে আপনার বেশ কিছুটা সেভিংস হবে। বিশেষত যারা চাকরি করেন তাদের জন্য টাকা জমানোর জন্য এটি ভিশন উপযোগী।
ষষ্ঠতঃ প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কেনা বন্ধ করুন। যে জিনিসটা আপনার নেই সেই জিনিসটা কিনুন। কিন্তু একই জিনিস অাছে সেটা কেনা বন্ধ করুন। মেয়েদের ক্ষেত্রে ড্রেস এবং জুতো কেনার কোন উৎসবের দরকার হয় না। আবার ছেলেদের ক্ষেত্রেও সেরকমই। তাই অহেতুক টাকা খরচ করা বন্ধ করুন।
সপ্তমত, পেট্রোপণ্যের দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। কখন দাম কমলেও যতটা দাম বেড়েছে ততটা দাম কিন্তু কমেনা। পেট্রোপণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে করে আপনি যখন অফিস যাছচ্ছেন সামান্য এক কিলোমিটার দূরত্বে, আবার কখনো দূরে কোথায় গেলে বাইক ব্যবহার করছেন । সে ক্ষেত্রে অল্প জায়গার জন্য বাইক ব্যবহার বন্ধ করে, সাইকেল ব্যবহার করুন এবং দুরে যাবার সময় বাস ট্রেন ব্যাবহারে টাকা বাঁচবে। তাতে পলিউশন কমবে এবং নিজের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। তার সাথে টাকা খরচ কম হবে।
অষ্টমত, যেকোনো জিনিস কিনতে গেলে বার গেটিং করুন। বেশিরভাগ জিনিসেই আকাশছোঁয়া দাম থাকে, সেগুলো বার্গেনিং করে কিনতে পারলে আপনি লাভবান হবেন। আর ঠিকঠাক করে বার গেটিং না করতে পারলে উল্লু বেনে যাবেন। তাই বার্গেনিং করলে আপনারই লাভ হবে।

নবমত, মাঝেমধ্যেই পার্টি করা বন্ধ করুন। কিন্তু আপনি মজা করতে পছন্দ করেন। তাই যে কোন পার্টি হোটেল বা রেস্টুরেন্টে গিয়ে এককাদা পয়সা খরচ না করে বাড়িতে পার্টি দিন। তাতে আপনি বেশি টাইম বন্ধু-বান্ধবদের সাথে অতিক্রান্ত করতে পারবেন। আবার টাকাও অনেক কম খরচ হবে। আর নিজে যদি ভাল খাবার বানাতে পারেন তাহলে তো পোয়াবারো। নিজের হাতের রান্না খাইয়ে তাক লাগাতে পারবেন। বাড়িতে বেশ খানিকটা বিরিয়ানি তৈরি তৈরি করতে গেলে আপনার যা খরচা পরে, দোকানে খেতে গেলে তার দ্বিগুণ অথবা তিনগুণ দাম পড়ে। তাই নিজেকে সংযত করুন। গার্লফ্রেন্ডকে বারবার কোন বড় রেস্টুরেন্টে না নিয়ে গিয়ে মাঝে মধ্যে রাস্তার ধারে ধাবাতেও খাইয়ে আনতে পারেন।
দশমত, আমরা অনেক সময়ই বন্ধু-বান্ধব বা পাশের বাড়ির লোকেদেরকে ফলো করি। তাদের পোশাক আশাক এমনকি খাবার-দাবারও অনুকরণ করে যথেচ্ছ খরচা করে থাকি। নিজেকে সংযত করে নিন। আর তাতেই টাকা জমাতে পারবেন। নেসেসারি আর লাখশারিটা বুঝতে শিখুন।
একাদশতম, বিশেষ দরকার না পড়লে কার্ডে অথবা অনলাইন পেমেন্ট করা বন্ধ করে ক্যাশ পেমেন্ট করুন। আপনি যদি কোন কাউকে দশ টাকা ক্যাশ গুনে দেন তখন যে ব্যথাটা আপনার লাগবে, সেটা অনলাইন, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডে পে করলে কতটা ব্যথা লাগবে না।

ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। তাই টাকা জমাতে চাইলে এই পরামর্শ গুলো ফলো করুন। আর নিজেকে ভীষণভাবে সংযত করে নিন। তাহলেই আপনার টাকা জমবে এবং ভবিষ্যতে আপনি আরো ভালো থাকতে পারবেন। আজকাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বয়স্ক বাবা, মাকে ছেলেমেয়েরা দেখছে না। কিন্তু একটি স্পষ্ট কথা, তাহলে আপনার কাছে টাকা পয়সা থাকলে ছেলেমেয়েরা আপনাকে অবশ্যই দেখবে। তাই সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে নিজেকে বেশ খানিকটা সংযত করে টাকা জমান অাজ থেকেই।

Loading

Leave a Reply