ফিচার

কোনও বিশেষ সম্প্রদায় কেন জড়িয়ে পড়ছে জঙ্গি কার্যকলাপে?

একদল মানুষ বারবার বলে থাকেন জঙ্গিগোষ্ঠীর বেশির ভাগই একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের হয়ে থাকে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ গ্রেপ্তার আলকায়েদা জঙ্গি নিয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্র ও বিভিন্ন ধরনের বোমা উদ্ধার হয়েছে। তারা কোন বড়সড় নাশকতার ছক করছিল বলেই মনে করা হচ্ছে। এমনকী তাদের একজন জঙ্গি পুলিশের চাকরির জন্যও দরখাস্ত করেছিল। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে জঙ্গি কার্যকলাপে কেন জড়িয়ে পড়ছে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে কী অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষ এই ধরনের কোনও কাজে জড়াচ্ছে না?
আসল কথাটা হল আমরা বারবার একটি বিশেষ সম্প্রদায়কে পিছনের দিকে ঠেলে দিয়েছি। আমরা অনেকেই মনে করি ভারতবর্ষ মানে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের দেশ। তাই কেবলমাত্র তারাই এদেশে বসবাস করবে। এমনকী বিভিন্ন দলের নেতা মন্ত্রীরা সম্প্রদায় নিয়ে বিভিন্ন রাজনীতি করে থাকেন। অনেকেই মনে করেন তৃণমূল মানে তারা একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়ে মাতামাতি করে। আবার অনেকে মনে করেন বিজেপি মানেই তারা একটি সম্প্রদায় নিয়ে মাতামাতি করে। এমনকী বিজেপি নেতা বলেও ছিলেন নজরুল ইসলামের একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কিন্তু ভারতবর্ষের ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে, ভারতবর্ষের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা পছন্দ করেন না।

এদেশের মানুষ সমস্ত ধর্ম একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতেই পছন্দ করে। কিন্তু কী কারণে বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। তার কারণ হল, বেশ কিছু মানুষ বারবার বিশেষ সম্প্রদায়কে নিচু মনে করে এসেছে। একপ্রকার তাদের বিশেষ সম্প্রদায়ের খেদোক্তি থেকেই হয়তো এই ধরনের জঙ্গি গোষ্ঠীতে নাম লেখাচ্ছে তারা। তবে কী অন্যান্য সম্প্রদায় জঙ্গিগোষ্ঠীতে নাম লেখায়নি? এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তবে প্রায় সমস্ত মাওবাদী অন্য সম্প্রদায়ের হতো না। মাওবাদীদের উপর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, দিনের পর দিন তারা নিপীড়িত হওয়ার ফলেই তারা মাওবাদী হয়ে উঠেছিল। একটি সাক্ষাৎকারে ছত্রধর মাহাতোর বাবা জানিয়েছিলেন, আমি দু দুটো নেতার বাবা বটে’ অর্থাৎ তাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জেতার জন্য তারা মাওবাদী হয়ে উঠেছিল। হয়তো ঠিক তেমনভাবেই বিশেষ একটি সম্প্রদায় নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে জঙ্গি হয়ে উঠছে। কিছু কিছু সময় এমন শোনা যায়, তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে দুটি তিনটি এমনকী দশটি পর্যন্ত সন্তানের জন্ম দিয়েছে। এটির ফলে মানেটা পরিষ্কার হয়ে গেল যে বিশেষ সম্প্রদায়ের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বদ্ধপরিকর। তার মানে এই নয় যে বিশেষ সম্প্রদায়ের জঙ্গি সত্ত্বাকে বেশি করে উস্কানি দেওয়া। প্রতিটি মানুষের উচিত নিজেকে সংযত করা। যে কোনও প্রকারের অন্যায় থেকে বেরিয়ে আসা।

সমস্ত রাজনৈতিক দলই সম্প্রদায় নিয়ে বিভিন্ন রকম রাজনীতি করে থাকে। এমনকী পশ্চিমবঙ্গেও এই রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। সমস্ত রকম রাজনীতি ভুলে সব সম্প্রদায় একসাথে মিলিত হয়ে কাজ করা উচিত। যত সম্প্রদায় নিয়ে বিভেদ তৈরি করবে, ততই রাজনৈতিক নেতাদের লাভ হবে। সর্বপ্রথম মনে রাখা দরকার আমরা প্রত্যেকেই একজন মানুষ। উৎপল দত্তের মরা নাটকে দেখা গিয়েছিল পথের ধারে এক ব্যক্তি মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তাকে নিয়ে কেউ বলে সে মুসলমান আবার কেউ বলে সে হিন্দু। কেউ তাকে গোড় দিতে চাইছিল, আবার কেউ শ্মশানে দাহ করতে চাইছিল। কিন্তু সকলে ভুলেই গিয়েছিল যে আসলে সে একজন মানুষ। এমন সময় এক ফকির লালনগীতি গেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল “সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে, লালন বলে জাতের কি রূপ দেখলাম নারে নজরে।” এরপর সকলের ঘোর ভাঙে। আসলে ওই ব্যক্তি সর্বোপরি একজন মানুষ। তাই জাতপাত ভুলে মনুষ্য ধর্মে নাম লেখান আপনারা সকলে। তবেই দেশ এবং জাতির মঙ্গল হবে। তাই জঙ্গিকে জঙ্গি হিসেবেই দেখা উচিত, কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের তকমায় নয়।

Loading

Leave a Reply