মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিট পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে গিয়ে নিখোঁজ হয় হুগলির কোন্নগরের মেধাবী ছাত্র অভিক মন্ডল। অবশেষে শুক্রবার সকালে গঙ্গার জলে তার মৃতদেহ উদ্ধার হয়। নদীতে স্নান করতে যাওয়া বেশ কয়েকজন যুবক এই দেহ ভেসে উঠতে দেখে খবর দেন পুলিশে। উত্তরপাড়া থানার পুলিশ গিয়ে ওই মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ঘটনায় শোকোস্তব্ধ গোটা এলাকা ছেলেকে খুন করা হয়েছে, কাঁদতে কাঁদতে এই কথা বলে বলে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ছেন অভিকের মা ঝর্ণা মন্ডল।
জানা গেছে, অভিক অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র বলেই পরিচিত। গত বছরে উচ্চমাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। তারপর সে কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে ভরতি হয়। তবে তার লক্ষ্য ডাক্তারি পড়া। তাই রবিবার নিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে বাবা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আসার পর বাবা, মা সকলকে চা করে খাওয়ায় অভিক। এরপর রাত আটটা নাগাদ মা, বাবাকে সে জানায় যে নিটের অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করে সাইবার ক্যাফে থেকে প্রিন্ট বের করতে যাচ্ছে। মা ঝর্ণা মণ্ডল ছেলের সঙ্গে যেতে চান। কিন্তু অভিক জানায় যে ১৫ মিনিটের মধ্যে সে ফিরে আসবে, তাই তার দরকার নেই। পরে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় অভিক। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বাড়িতে না ফেরায় সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। স্থানীয় সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে বাবা জিজ্ঞাসাও করেন, ছেলে এসেছিল কিনা। ক্যাফে মালিক তাকে জানান অভিক সাড়ে আটটা নাগাদ প্রিন্ট আউট নিয়ে চলে গেছে। এই খোঁজাখুঁজির মাঝেই অভিকের সাইকেলটি একটি জায়গায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। বুধবার সকালে নদী থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিকের পরিবারের লোকজন।
পাশাপাশি আবাসনের অন্যান্য সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরিবারের প্রত্যেকেরই দাবি অভিককে পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়েছে। তাদের দাবি, যেখান থেকে তার সাইকেল উদ্ধার হয়েছে তা থেকে অনতিদূরে তার দেহ ভেসে উঠল, তাই এটা কোনও আত্মহত্যার ঘটনা হতে পারে না, আর অভিক আত্মহত্যা করার যুবক নয় বলেই মনে করছেন তারা। সমস্ত ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে উত্তরপাড়া থানার পুলিশ। এখনও এলাকায় শোনা যাচ্ছে অভিকের কথা। এখনও এলাকায় মুখে মুখে ফিরছে অভিকের মৃত্যুর চর্চা। একইসাথে শোক সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করেছে এলাকাটিকে। অনেকে বলছেন যে ইচ্ছা নিয়ে অভিক বাড়ি থেকে বের হয়েছিল সেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। বাড়িতে ফিরে এল নিথর দেহ।