বাদুড় থেকে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো নিয়ে বর্তমানে গোটা বিশ্বজুড়ে আলোচনা চলছে। এমনকী চীনে সি-ফুড মার্কেটে বাদুড়ের দেহ থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনার কথাও উঠে আসে। ভারতবর্ষেও দুটি প্রজাতির বাদুড়ের দেহে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতির কথা উঠে এসেছে। তবে এর কোনওকিছুই প্রমাণিত হয়নি। তবে দেশজুড়ে বাদুড় নিয়ে কিছুটা হলেও আতঙ্কিত মানুষ। যদিও গ্রামে বাদুড়ের আধিক্য থাকলেও আতঙ্ক দূরে সরিয়ে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করছেন কালনার ‘বাদুড় গ্রাম’ বলে পরিচিত কল্যাণপুরের দুর্লভপাড়ার মানুষ।
ওই গ্রামে শতাব্দীর প্রাচীন বট গাছ রয়েছে। বহু বছর ধরে ওই বট গাছেই বাসা বেঁধেছে কয়েক হাজার বাদুড়ের দল। ফলে ওই এলাকাটি বাদুড়গ্রাম নামেও পরিচিত। দিনের বেলায় ওই এলাকার বটতলায় গেলে বাদুড়ের কোলাহল ও গাছের ডালে ডালে বহু বাদুড় ঝুলে থাকতে দেখা যায়। সূর্য অস্ত যাওযায় সময় সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে গ্রামের আকাশে উড়তে শুরু করে হাজার হাজার বাদুড়। গোটা গ্রামে চক্কর দিয়ে উড়ে যায় অন্যত্র। আবার ভোর হতে না হতেই কিচিরমিচির শব্দে ওই বটগাছে ফিরে আসে তারা। ওই প্রাচীন গাছেই বংশ বিস্তার করে। গাছের নীচে রয়েছে গ্রামের বারোয়ারি পুজোর মণ্ডপ। যদিও ওইসব বাদুড়ের দল গ্রামের মানুষের কাছে এতদিনে আপন হয়ে উঠেছে। একসময় বাদুড় থেকে নিপা ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। কিন্তু এলাকায় মানুষ কোনওরকম আতঙ্কিত হননি। এবার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে বাদুড়ের প্রসঙ্গ উঠে আসে। কিন্তু তাতেও কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি গ্রামের মানুষের মধ্যে। গ্রামে গিয়ে দেখা যায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন গ্রামবাসীরা। বাদুড়ের বাসস্থানেও কোনও বাধা নেই। গ্রামের মহিলদের পুকুর ঘাটে যাওয়া, বারোয়ারি তলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কথাবার্তা সবই চলছে আপন গতিতে।
গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, টিভিতে ও কাগজে করোনার বিষয়ে বাদুড় নিয়ে চর্চা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের চোখে তেমন খারাপ কিছুই নজরে পড়েনি। স্বাভাবিক রয়েছে গ্রামের জীবন যাপন। ছোট থেকে গাছে বাদুড় দেখে আসছি। আমাদের কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে গ্রামের মানুষ গাছের তলায় পড়ে থাকা কোনও ফলে হাত দেয় না। ওরা আমাদের কোনও ক্ষতি করে না। আমরা ওদের কোনও অসুবিধা সৃষ্টি করি না। বহু জায়গা থেকে অনেকে বাদুড় দেখতে আসেন। আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।