এ যেন রূপকথার ঘুমন্ত রাজপুরীর বাস্তব রূপ। মধ্য এশিয়ার কাজাখস্তানের দুটি গ্রামে যখন তখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। বাইরে থেকে গেলেও শুধু ঘুম পায়। গ্রাম দুটির নাম কলাচি আর ক্রাসনোগোর্স্ক। কাজাখের স্তেপ অঞ্চলে ছড়ানো এই জনপদদুটি যেন সত্যি করেছে লর্ড টেনিসনের সৃষ্টি ইউলিসিসকে।
সাবেক সোভিয়ের রাশিয়ার অংশ ছিল কাজাখ প্রদেশের তথা এই গ্রাম দুটি। এখনও মূল বাসিন্দা হল রুশি এবং জার্মানরা। বলা নেই‚ কওয়া নেই‚ এখানে মানুষ কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে উঠলে মনে থাকে না আগের স্মৃতি। বিস্মরণের সঙ্গে থাকে মাথাব্যথা আর দুর্বলতা। এরকমও হচ্ছে‚ যে এক এক জন সারা দিনে মোট ৬ বার ঘুমিয়ে পড়ছেন।
স্কুল‚ কাজের জায়গা‚ বাড়ি‚ সর্বত্র একই উপসর্গ। ক্লান্তি আর শ্রান্তি। তারপর দু চোখ জুড়ে নেমে আসছে ঘুমের মাসি ঘুমের পিসি। শুধু মানুষ নয়। এই ঘুমরোগের শিকার পশুপ্রাণীরাও। ঘরে ঘুমোচ্ছে মানুষ‚ বাইরে পোষ্যরা।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন‚ কোনও ভৌতিক কারণ নয়। এই ঘুমরোগের পিছনে সক্রিয় বৈজ্ঞানিক কারণ। গ্রামদুটির কাছেই আছে ইউরেনিয়াম খনি। সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার আমলে এটি ছিল সমৃদ্ধ খনি। এখন পরিত্যক্ত। কিন্তু এই খনিজের ফলে গ্রামের বাতাসে বেড়েছে কার্বন মনোক্সাইড আর হাইড্রোকার্বন। কমেছে অক্সিজেন। ফলে স্থানীয় বাসিন্দা সহজেই শ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। ঘুমিয়ে পড়ছেন।
সোভিয়ের রাশিয়ার পতনের পরে গ্রামে কমে গেছে লোকসংখ্যা। অতীতের প্রায় ৬৫০০ জন লোকের বদলে এখন থাকেন মাত্র ২০০-র বেশি মানুষ। তাঁদেরকেও সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ স্থানে। বিষময় বিপজ্জনক গ্রামকে ফেলে রেখে।