যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অস্ত্রোপচার করে বাঁ চোখের ছানি বাদ দেওয়ার নিদান ৬৫ বছরের ঝুনু দত্তকে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘন্টা পর শেষমেষ চোখটাই বাদ দিতে হল বৃদ্ধার। এই ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে হাসপাতাল ও অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থপ্রতিম মন্ডলের বিরুদ্ধে যাদবপুর থানা ও মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়াতে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন ঝুনুদেবীর ছেলে রাজা দত্ত। যদিও হাসপাতালের প্রিন্সিপাল অশোক ভদ্র সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের পর ঝুনুদেবীর চোখে সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। বয়স ও ডায়াবেটিস থাকার কারণে সংক্রমণ হয়েছিল। অস্ত্রোপচারে কোনও ত্রুটি ছিল না বলে দাবি তাঁর। তাও অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। দশ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তারপর কারও দোষ পাওয়া গেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনার সূত্রপাত,গত ৬ জানুয়ারি ডায়াবেটিসের সমস্যা নিয়ে যাদবপুরের কেপিসি হাসপাতালে ভর্তি হন গড়িয়ার বাসিন্দা ঝুনু দেবী। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, দুই চোখে ছানি পড়েছে। বাঁ চোখে সমস্যা বেশি। ডায়াবেটিস কমলে বাঁ চোখের ছানির অস্ত্রোপচার করার কথা বলা হয়। সেইমতো ১১ জানুয়ারি বাঁ চোখে ছানি অপারেশন করা হয়। দুপুর আড়াইটে নাগাদ বেডে দেওয়া হয় ঝুনুদেবীকে। তার ঘন্টাখানেক বাদ থেকেই চোখে তীব্র যন্ত্রনা অনুভব করেন। সেই সঙ্গে ওই চোখে দেখতেও পাচ্ছিলেন না ঠিক মতো। অভিযোগ, তারপর থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বারবার জানানো হলেও তাঁরা তেমন গুরুত্ব দেননি। এরপরও বারবার বলা সত্ত্বেও হাসপাতাল গুরুত্ব না দিলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ঝুনুদেবীকে। সেখান থেকে জানানো হয়, চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাদ না দিলে বিপদ হতে পারে। তাও শেষ চেষ্টা করেন ঝুনুদেবীর ছেলে রাজা। বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও কোনও উপায় না দেখে শেষমেষ রাজারহাটের একটি চক্ষু হাসপাতালে বাঁ চোখ বাদ দেওয়া হয় প্রৌঢ়ার।
ষাটোর্ধ ওই বৃদ্ধা বলেন, “যার জন্য আমার চোখ নষ্ট হল তার কঠোর শাস্তি চাইছি। যাতে আর কারও এই ক্ষতি করতে না পারে।” ঝুনুদেবীর ছেলে রাজা অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত। প্রথমে মায়ের চোখের ছানি অপারেশনের জন্য লড়াই করেছেন তিনি। এখন তাঁর মায়ের চোখ যারা নষ্ট করল তাদের শাস্তির জন্য লড়াই করছেন তিনি। তাঁর কথায়, “কেপিসি হাসপাতাল মায়ের চোখের সংক্রমণের পর থেকে সব খরচ বহন করছে। তবে যার জন্য এটা হল তার শাস্তির জন্য যা করা দরকার সব করবো। যতদূর যেতে হয় যাবো।” এখন দেখার সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও পুলিশ কি ব্যাবস্থা নেয়?