জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য। প্রথমে করোনা, তারপর আমফান সারা রাজ্যের মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে প্রকৃতির কাছে মানুষ কতটা অসহায়। প্রথমে একটি ছোট ভাইরাস সমস্ত দেশকে এবং এরাজ্যকেও গৃহবন্দী করে ফেলেছে। তারপর প্রবল ঝড়ের তাণ্ডবে খড়কুটোর মতো ভেসে যাচ্ছে মানুষের জীবন-জীবিকা। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন। লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মুহূর্তেই ভুলে যাচ্ছে। এখন মানুষ কোনরকমে একটা শক্তপোক্ত জায়গায় মাথা গুঁজে প্রাণ রক্ষা করতে চাইছে। গ্রামের বিভিন্ন স্কুলে বহু মানুষকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কোন প্রকারে অন্তত প্রাণে বাঁচুক। তারপরেও অনেক মানুষ নিজেদের বাড়িতে থেকে গিয়েছিল। বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন না বলে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে এই ঝড়কে উপেক্ষা করে বহু মানুষ প্রাণ ভয়ে ছোটাছুটি করছেন একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। চোখের সামনে হাজার হাজার বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। ভাসছে দীর্ঘদিনের সাজানো সম্পদ। আর অসহায়ের মতো ফ্যালফ্যাল করে দেখছে তারা।
বিভিন্ন এলাকা থেকে একের পর এক ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার খবর যেমন পাওয়া যাচ্ছে তেমনি রাস্তাতে গাছ উল্টে পড়ে থাকার খবর মিলছে। দিঘাতে বহু গাছ ভেঙে পড়েছে। ইলেকট্রিকের তার সহ খুঁটি রাস্তার মধ্যে পড়ে আছে। পাশাপাশি দীঘার সমুদ্রের ধারে বোলডার পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে। অন্যদিকে শহরতলীর অবস্থা ক্রমশ ভয়ঙ্কর হচ্ছে। নবান্ন থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজে কন্ট্রোলরুমে উপস্থিত থেকে সমস্ত রাজ্যের আমফান অবস্থা মোকাবেলা করছেন। কিন্তু নবান্নে বেশ কিছু কাঁচ ভেঙে পড়েছে। লন্ডভন্ড নবান্নের বেশকিছু ঘর। সব মিলিয়ে আমফান লন্ডভন্ড করে দিয়েছে নবান্নের একটি বড় অংশকে। পাশাপাশি এখনোও পর্যন্ত রাজ্যের তিনজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে করে কয়েক লক্ষ মানুষ গৃহহীন হচ্ছেন নিশ্চিত ভাবে।
এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় এখনো যেভাবে তাণ্ডব চলছে তাতে করে মনে করা হচ্ছে বহু এলাকায় এক প্রকার শ্মশানে পরিণত হবে।ইতিমধ্যেই কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলাতে তার তাণ্ডব শুরু করেছে আমফান। কলকাতায় বন্ধ করে দেওয়া হল সমস্ত উড়ালপুল। উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের সমস্ত উড়ালপুলের মুখে বসানো হল ব্যারিকেড। ইতিমধ্যেই হাওড়া ব্রিজ সহ দ্বিতীয় হুগলি সেতু দুলতে শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এই ভয়ঙ্করতা কোথায় গিয়ে থামে তা নিয়ে আতঙ্কিত রাজ্যের মানুষ।