ভারতবর্ষে যখন করোনা সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে, একদম প্রথম দিকেই, জনসংযোগ এড়াতে বন্ধ করে দেওয়া হয় বেলুড় মঠ এবং তাদের সমস্ত জায়গায় থাকা সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলি। এই নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায়। বলা হয় স্বামী বিবেকানন্দ ভারতবর্ষে প্লেগ সংক্রমণের সময় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আক্রান্ত রোগীদের সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু বেলুড় মঠ স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত। তাই এই সময় কীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হল বেলুড় মঠ। এই নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছিল সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। তবে রামকৃষ্ণদেবের বা বিবেকানন্দ অনুগামীরা এর প্রতিবাদ করেন। তাঁরাও লিখতে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর প্রতিরূপ রামকৃষ্ণদেব অনুগামীরা জানান, বাস্তবতা দেখুন তারপর বিচার করবেন।
এখন যে পরিস্থিতি তাতে করে মঠ এবং সংস্থাগুলি খোলা থাকলে সমস্ত মানুষের সংস্পর্শে এসে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি ছড়াতে পারে। সেই মতো পরিস্থিতি এলে বেলুড় মঠ অবশ্যই দেখিয়ে দেবে তাদের কার্যকলাপ। তবে মঠ কর্তৃপক্ষ সমালোচনার পরেও সিদ্ধান্তে অনড় ছিলন এবং তারা কোনও রকম জল্পনার মধ্য দিয়েই যাননি।
বারং বারের মতো এবারও তারা দেখিয়ে দিল তাদের আদর্শ। বিভিন্ন সময় বন্যাত্রাণ এবং খরার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তারা এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। করোনা মোকাবিলাতেও দুঃস্থদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। বেলুড় মঠ সহ ভারতবর্ষের সমস্ত জায়গায় মঠের অধীনে থাকা সমস্ত মঠ, মিশন, সংঘ কর্তৃপক্ষ একজোট হয়ে এগিয়ে এলেন করোনা মোকাবিলায়। ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে করোনা মোকাবিলায় দুঃস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। দুঃস্থদের দেওয়া হচ্ছে তিন কেজি করে চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি করে অালু।
এছাড়াও থাকছে বিস্কুটের প্যাকেট সহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় আরও কিছু জিনিসপত্র। মঠের অধীনে থাকা সমস্ত কলেজগুলির ল্যাবরেটরিতে তৈরি হচ্ছে স্যানিটাইজার। আর সেগুলি বোতলবন্দি করে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে দুঃস্থ মানুষদের হাতে। এছাড়াও কাপড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মাস্ক। অার তা তাদের জন্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তবে যাতে করে বেশি মানুষের সমাগম না হয় সেজন্য ২০০ জন করে মানুষকে একদিনে এই জিনিসপত্র এলাকায় এলাকায় গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসছে তারা। মঠ ও মিশনের মহারাজরা জানিয়েছেন, এখন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে পারে। সেজন্য তাঁরা খুব সাবধানতা অবলম্বন করে অল্প অল্প কিছু করে মানুষদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন জিনিসপত্র।
ভবিষ্যতে সংক্রমণ বন্ধ হয়ে গেলে দুঃস্থদের হাহাকার দেখা দেবে। তখন তাঁদের জিনিসপত্র আরও বেশি করে পৌঁছে দেবেন। স্বামীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বেলুড়মঠে এখনও শিরদাঁড়া সোজা করেই দাঁড়িয়ে আছে। তার আবার প্রমাণ মিলল। নজির গড়ল মঠ কর্তৃপক্ষ।