মানুষের মানবিকতা দিনদিন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। স্বামী বিবেকানন্দ যে আমাদের এই ভারতবর্ষ এমনকি পাশের জেলা কলকাতাতেই জন্মেছিলেন এবং রামকৃষ্ণ দেবের জন্ম জেলাতেই যে এমন ঘটনা ঘটছে তা দেখে স্তম্ভিত সকলে। স্বামী বিবেকানন্দের” জীবে প্রেম করে যেইজন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” এ যেন বাচ্চা ছেলের মুখস্থ বলা বাণী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এই সমস্ত পড়া গুলিকে কেবলমাত্র কন্ঠস্থ করেছি, আত্মস্থ করতে পারেনি। কখনো দেখা যাচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা অসুস্থ রোগী রাস্তার মধ্যে পড়ে থেকেই মৃত্যুবরণ করছে। আবার কখনো দেখা যাচ্ছে বাড়িতে মৃতদেহ পড়ে থাকছে, সৎকারের কোন ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। প্রশাসনিক হর্তাকর্তারা এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়ছেন সমস্ত দিক থেকে। প্রশাসনিক কর্তাদের বাড়ির লোক থাকা সত্ত্বেও চাকরি বাঁচাতে, সব থেকে বড় কথা হল অামাদের বাঁচাতে দৌড়ে যেতেই হচ্ছে। তারা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন দিনের পর দিন তাদের সহকর্মীরা কখনো করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, আবার কখনো করনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও যাচ্ছেন। এত কিছু সহ্য করেও তারা মানুষের হাতটা শক্ত করে ধরতে চাইছে। সেটা কেবলমাত্র মানুষের সাহায্যার্থেই। আর উল্টো দিকে সাধারণ মানুষগুলো যেন উল্টোপুরাণ গাইছে। দেখা যাচ্ছে বাজারের থলি নিয়ে দিনের পর দিন রাস্তাঘাটে ভিড় জমাচ্ছে। মুখে মাক্স পর্যন্ত নেই। এ তো গেল ছোটখাট ব্যাপার। সাধারণ মানুষগুলো একবারও ভেবে দেখছে না তাদের আত্মীয়রা বা তারা নিজেরা যদি করনায় আক্রান্ত হন তখন তাদের কিরূপ পরিস্থিতি হবে।
আরামবাগের পুড়শুড়ার দামোদর নদীর নিচে এক বেওয়ারিশ অর্ধদগ্ধ দেহকে ঘিরে চাঞ্চল্য দেখা যায়। ঘটনার প্রতিবাদ করে স্থানীয় মানুষজন পথ অবরোধ করে। ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার রাত্রি বারোটা নাগাদ অজানা কিছু লোক দামোদর নদীর তীরে একটি মৃতদেহ সৎকার করতে থাকে। ভোরের দিকে এলাকায় জানাজানি হতেই তারা মৃতদেহটি রেখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে পড়ে থাকা পি পি কিট, মাস্ক ইত্যাদি সহ অর্ধদগ্ধ মৃতদেহটিকে সৎকার করেন। এখন প্রশ্ন উঠছে ভারতবর্ষ কি আবার ছিয়াত্তরের মন্বন্তর দেখতে চলেছে? সেই কাহিনী, কুকুর, শেয়ালে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে মানুষের মৃতদেহ। এমনটাই কি হতে চলেছে। যদি মানুষ না সুধরায় তবে হয়তো আবার হবে মন্বন্তর। মানসিকতা বিলুপ্তি হচ্ছে এটাই প্রমাণ তার। যদি করণায় আক্রান্ত মৃতদেহগুলি সৎকার বা কবরস্থ করা না যায় তবে কিছুদিন পর দেখা যাবে মর্গে আর মৃতদেহ রাখা যাচ্ছে না । তখন দেহ গুলিকে যত্রতত্র ঝোপঝাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রেখে যাওয়া হবে এবং যা থেকে পচে গলে সমস্ত পরিবেশ দূষিত হয়ে উঠবে এবং তার থেকে করনার সংক্রমনও ঘটবে। এখন প্রশ্ন উঠছে পুড়শুড়া যে গ্রামবাসীরা মৃতদেহ সৎকার করা নিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন এবং খানাকুলে ইলেকট্রিক চুল্লিতে করনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে পড়াতে দেওয়ায় বাধা দিলেন, তাদের পরিবারের কেউ যদি করনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়, তাহলে তাদের সৎকার কোথায় করবেন ! আমরা মানুষরা কেন একজন অপরজনের পাশে দাঁড়াচ্ছি না? দেশের এই রকম পরিস্থিতিতে কেন একজন অপরজনের হাতটা ধরছি না? কেন বলছি না নির্দিষ্ট একটি ফাঁকা জায়গায় করনায় আক্রান্ত মৃতদেহগুলি সৎকার করা হোক। লুকিয়ে সৎকারের প্রয়োজন নেই। আমরা ছোট থেকেই জানি আগুনে পুড়লে যে কোন জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। তবে আমরা কেন নিজেরা ঠিক করে দিচ্ছি না একটা ফাঁকা জায়গা? যেখানে মৃতদেহ গুলিকে সৎকার করা যায়।
পাশের বাড়ির কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের আমরা অচ্ছুত করে দিচ্ছি। কিন্তু কেন আমরা মুখে মাক্স লাগিয়ে নিজেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রেখে বা কম করে ফোন করে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি না? কেন বলছি না আপনারা বাড়িতে আইসোলেশনে থাকুন। বাজারের ব্যাগটা আমরাই ভর্তি করে এনে দিচ্ছি। কাউকে সাহায্য করে দেখুন নিজের মাথাটা কতটা উঁচু হয়ে যায়। নিজের কাছেই তখন নিজেকে কতটা বড় মনে হয়। তাই আসুন না দেশকে বাঁচানোর জন্য একে অপরের হাত ধরে নিই। আর করোনাকে জয় করি।