এভাবে মাস্ক পরে যে বিয়ে করতে হবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি ওরা। তবু অদৃষ্টের পরিহাস মেনে নিতে হল তরুণ যুগলকে। বিয়েতে হাজির ছিলেন গুটিকয়েক আত্মীয়। তবু তাই নিয়েই মন্দিরে নির্জনে বিয়ে হয়ে গেল ওদের। ওরা বর্ধমান শহরের অর্ণব সূত্রধর আর রায়নার গ্রামের তরুণী শম্পা সাহা। সামাজিক বিয়ে হলেও আলাপ ছিল আগে থেকেই। বিয়ে নিয়ে আর পাঁচজনের মতো স্বপ্ন ছিল ওদের মনে। বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ১৭ এপ্রিল। কিন্তু এপ্রিলের বসন্ত পেরিয়ে জুনের বর্ষা আসন্ন। দফায় দফায় ওদের এক হতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লকডাউন। আবার পঞ্চম দফার আনলক-১ চালু হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে সর্বমঙ্গলা বাড়ির পাশে এক নির্জন মন্দিরে ওরা বিয়ে সারলেন। সঙ্গে মাত্র জনা সাতেক আত্মীয় ও পুরোহিত। সব ধর্মীয় রীতি মানা হলেও এই বিয়েতে যেন কোনও আনন্দ নেই। সব কিছু যেন গ্রাস করেছে সর্বনাশা করোনা। বিয়েতে সবার মুখে মাস্ক। মাস্ক পাত্রপাত্রীর মুখেও। এমনকি একটা ছবি রাখবেন স্মৃতি হিসেবে সে উপায়টুকুও নেই।তবু আর কোন ভরসা পাচ্ছিলেন না। কবে রোগের প্রকোপ কমবে কবেই বা সব স্বাভাবিক হবে জানেন না কেউই। তাই বাধ্য হয়ে দুই পরিবারের এই সিদ্ধান্ত। সাতজনকে সাক্ষী রেখেই নীরবে শুরু হল সাত পাকে বাঁধা শম্পা-অর্ণবের নতুন জীবন।
অর্ণব পেশায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ। তিনি বলেন, অনুষ্ঠান করে বিয়ের জন্য সব আয়োজন সাড়া হয়ে গিয়েছিল। ক্যাটারিং বুক করা, বিয়েবাড়ি ভাড়া নেওয়া, সানাই সবই। বিয়ের কার্ড ছাপানোর পাশাপাশি আত্মীয় পরিজন, বন্ধু বান্ধবদের আমন্ত্রণও জানানো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাতপাকে বাঁধ সাধল মারণ কোভিড-১৯। লাগাতার শুরু হল লকডাউন। পিছিয়ে গেল বিয়ের অনুষ্ঠান।
কিন্তু শেষপর্যন্ত অনুষ্ঠানবাড়িতে নয়, বিয়ে হল নির্জন মন্দির চত্বরে। মন্দির কমিটির অনুমতির পাশাপাশি আগাম নেওয়া হয়েছিল পুলিসের অনুমতি। সদ্য সাতপাকে বাঁধা পড়া তরুণী শম্পারও মন খারাপ। তিনি বলেন, বিয়ের আয়োজনের সবকিছু বাতিল করে এক প্রকার বাধ্য হয়েই এভাবে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হল। তবু শেষ পর্যন্ত বিয়েটা তো হল।