বিশ্ব

বাংলাদেশে ৮০০ ছাড়ালো করোনা আক্রান্তর সংখ্যা

ঋদি হক,ঢাকা বাংলাদেশঃ-
রাত পোহালেই পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ। বৈশাখ ঘিরে বাংলাদেশের মতো মহাআয়োজন সম্ভব এই তল্লাটের আর কোথাও চোখে পড়ে না। মাস দু’য়েক আগে থেকেই চলতে থাকে প্রস্তুতি পর্ব। চারুকলা, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী, শাহবাগ ফুল মার্কেট, ধানমন্ডিরি রবীন্দ্র সরবরসহ গোটা বাংলাদেশটাই যেন বৈশাখী মঞ্চ হয়ে ওঠে। আজ সেখানে লকডাউন! প্রতিটি মুহূর্ত মহাতঙ্কের কূপে রেখে নিজেকে রক্ষার প্রানান্তকর প্রচেষ্টা। অথচ প্রতিটি মানুষ এদিনটির নির্মল বাতাসে বুক ভরে নিশ^াস নিতো। বাহারি সাজে প্রাণের আহ্বানে প্রতিটি আয়োজন মিলনমেলায় পরিণিত হতো। বাঙালি বছরজুড়ে অপেক্ষার এই দিনটি আজ কালোমেঘে ছেয়ে গেছে। আনন্দের পরিবর্তে বিষাদের ছায়া! এক অজানা ভাইরাস কেড়ে নিয়েছে গোটা দুনিয়ার আনন্দ। তার বদলে কেবলই শপ মিছিল! ইউরোপ থেকে নিম্নআয়ের দেশসমূহ একই কাতারে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশগুলোর হাসপাতালগুলো শপ কফিন রাখার জায়গা আরও আগেই শেষ হয়ে গেছে। গেল ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে যে ভাইরাসের উৎপত্তি, পরবর্তীতে সে রাতারাতি গ্রাস করে গোটা দুনিয়া। যার নাম ‘করোনাভাইরাস’ বা কোভিড-১৯! যা এখনও পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য!



এরই ধারাবাহিকতায় জনবহুল বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংখ্যক ১৮২জন আক্রান্তর বার্তা দিয়েছে স্বস্থ্য অধিদপ্তর। এতে করে আক্রান্তর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০৩। প্রতিদিনই আক্রান্ত উর্ধমুখি। ৮ মার্চ প্রথম করোনা শনাক্ত হবার ১০ দিনের মাথায় একজন মারা যান। এরপর ১০ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল অব্দি ৫ জনসহ মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ জন। ঠিক এই সময়টিতে দাঁড়িয়ে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক দেশবাসী উদ্দেশ্যে বলেন, নিজে বাঁচতে এবং দেশকে বাঁচাতে করোনা পরীক্ষা করুন। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন বুলেটিনে যুক্ত হয়ে এই বার্তা দিলেন তিনি। প্রতিদিনই বাংলাদেশে নতুন নতুন এলাকায় আক্রান্তর খোঁজ মিলছে। ঢাকা হয়ে ওঠেছে হটস্পট। দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন আক্রান্তদের বেশির ভাগই নারায়ণগঞ্জ থেকে গিয়েছে বলে ইতিহাস রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, আক্রান্তদের ৫০% হচ্ছে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা। বাকী ৩৫% নারায়ণগঞ্জের। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই করোনার লক্ষ্মণ নিয়ে মৃত্যুর খবর মিলছে। তবে পরীক্ষা না করায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিশ্চিত করে কিছু বলছে না।


লকডাউন নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করে চলেছেন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে মাইকিং, রাস্তায় ওষুধ ছিটানো, হোমকোয়ারেন্টাইনসহ সামাজিক সচেতনতা নিয়ে কাজ করে চলেছেন সেনা সদস্যরা। পাশাপাশি পুলিশ ও র‌্যাব লকডাউন মেনে চলতে মাইকিং করে চলেছে। রাজধানীতে কাঁচাবাজার ও খোলা স্থানের দোকানপাট সকাল ৮টা থেকে বেলা দুটোর পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টা পর ঘরের বাইরে পা রাখলেই কঠোর আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মসজিদ, মন্দিরসহ সকল উপাসনালয়ে না গিয়ে ঘরে বসেই প্রার্থনা করতে সরকারী নির্দেনা জারি করা হয়েছে। তবে, গ্রামের হাটবাজার ও ঢাকার শহরতলীর অবস্থাটা ভয়ংকর। এসব বাজারে গাদাগাদি করে সওদা করে যাচ্ছে এলাকার বাসিন্দা। এদের অনেকে মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করছেন না। প্রধানমন্ত্রী বার বার সচেতন হতে সাধারণত মানুষের প্রতি আহ্বান জানানোর পরও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

Loading

Leave a Reply