ঋদি হক, ঢাকাঃ- বাড়ির ভাড়াটিয়াদের ভাড়া মওকুফ করে উল্টো খাদ্যসহায়তা দিয়ে নজির গড়লেন সাংস্কৃতিক জগতের বাসিন্দা শেখ শাহ আলম। করোনা পরিস্থিতিতে তার নিজের ভাড়াটিয়াদেরই নয়, আশাপাশের শাতাধিক অসহায় পরিবারকে দু’মাসের খাদ্য সহায়তা দেবেন তিনি। শৈশবকাল থেকেই সঙ্গীতের প্রতি দারুন টান ছিল তার। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে ওঠা কিশোর বাউল-বৈরাগীর একতারার সুর শুনলেই ছুটে যেতেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো। ভাবজগতের মানুষটি তখন থেকেই কথায় কথায় গান বাধেন। নিজেই সুর করে বন্ধুদের গেয়ে শোনাতেন। পেতেন বাহবাও। এতে করে তার উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। একসময় কিশোরটির মনোমন্দিরে স্থায়ী আসন পায়, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ। তাঁর দেশপ্রেম ও দেশের মানুষকে ভালোবাসা আর আত্মত্যাগ। সেই ভাবনা থেকে জাতিরজনকের সহধর্মীনি বেগম ফজিলাতুননেসার নামে প্রতিষ্ঠা করে ‘বঙ্গমাতা সাংস্কৃতিক জোট’। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতাকে নিয়ে প্রচুর গান লিখেছেন। তা প্রচার হচ্ছে সারাদেশে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে রয়েছে তার নিরলস প্রচেষ্টা। এই সংগঠনের ব্যানারে সারাদেশে কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। বর্তমান করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের শুরুতেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্ক, জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াস বিতরণ করেন। এখানেই থেমে থাকেননি এই মানুষটি। করোনা পরিস্থিতিতে সারাদেশে লকডাউন। ঘরবন্দি মানুষ। কর্মহীন মানুষের দীর্ঘ মিছিল! ঘরে খাবারের টান। বাড়ি ভাড়া পরিশোধ দূরঅস্ত!
ঠিক এই অবস্থায় শেখ শাহ আলমের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। নিরবে দু’চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। অস্থির মানুষটি নির্ঘুম রাত কাটান। এসময় তার মনে পড়ে নন্দিত কন্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার সেই গান ‘মানুষ মানুষের জন্যে–জীবন জীবনের জন্যে’। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলেন, তার বাড়ির ভাড়াটিয়াদের ভাড়া মওকুফ করে তাদের খাদ্যের যোগান দেবেন। এরপর তিনি বাড়ির ভাড়াটিয়াদের দুই মাসের ভাড়া মওকুফের ঘোষনা দেন। সেই সঙ্গে তাদের হাতে তুলে এক মাসের খাদ্য সহায়তা। শুধু তাই নয়, নিজ বাড়ির ভাড়াটিয়াসহ আশপাশের একশ পরিবারের হাতে তুলে দেন চাল, ডাল, আলু, পিয়াজ, লবন ও তেলসহ নিত্য প্রয়োজণীয় খাদ্য সামগ্রী। তার এই মানবিক গুণের জন্য তিনি আমাদের সমাজের শুভবোধের সারথী। শেখ শাহ আলম একাধারে গীতিকার, সুরকার ও নাট্যকার। জানালেন শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, যমুনা তীরের সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে দশ হাজার মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিতরণ করেছেন। জানান, করোনা ভাইরাসের কবল থেকে রক্ষায় মানুষকে ঘরে থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই নির্দেশ মেনে যারা ঘরে রয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই নিম্ন আয়ের মানুষ। যাদের ঘরে খাবার নেই। কাজ থেমে গেছে। তাতে করে বাড়িভাড়া মেটানো দূরের কথা খাবারের যোগানই নেই তাদের। তাই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া অব্দি তার এই মানবিক সহায়তা অব্যাহত থাকবে।