এবার বিশাখাপত্তনমে ভোররাতে ঘটে যাওয়া গ্যাস লিক কাণ্ডে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১, এর মধ্যে রয়েছি দুজন শিশু। ৮০০ জনেরও বেশি মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হলেও বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং এখনও তারা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আছে। এছাড়াও অারও ৫হাজারের বেশি মানুষ অসুস্থ। যত দ্রুত সম্ভব গ্যাসের প্রভাব কম করার চেষ্টা হলেও যা ক্ষতি হবার তা অনেকটাই হয়ে গেছে। ভোর ২টো ৩০ নাগাদ এই ঘটনা ঘটার জন্য অনেকেই বুঝতে পারেনি কি ঘটেছে। জানা গেছে কারখানায় তখন কেবলমাত্র নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কেউ ছিল না। হঠাৎ করে গ্যাস লিক হওয়ায় তারা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। পরপর সমস্ত জায়গায় খবর পৌঁছায়, খবর যায় পুলিশের কাছে। ততক্ষণে বেশ কিছু পশু, পাখি এবং মানুষজন রাস্তার মধ্যে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছেন। পুলিশ সাধারণভাবে মনে করছেন লকডাউন এর সময় কারখানা বন্ধ থাকার কারণে গ্যাসের জায়গাটি কোন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। তারপর লকডাউন শিথিল হতেই হঠাৎ করে খুলে দেওয়া হয় কারখানা। যার ফলে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদিও বা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই নয়াদিল্লির জাতীয় পরিবেশ আদালতে একটি সংস্থা এই কারখানার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে সরকার। যাতে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করে এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করে তার আবেদন জানিয়েছে সংস্থাটি। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড় দেওয়ায় সবেমাত্র খুলেছিল অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের ‘এলজি পলিমার ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের রাসায়নিক কারখানাটি। ভোর রাত ২.৩০ সময় গ্যাস লিক হওয়া শুরু হলে, মোটামুটি চারটে নাগাদ অস্বস্তিতে মানুষের ঘুম ভাঙ্গে।
তখনই খবর দেওয়া হয় পুলিশে। জরুরী ভিত্তিতে উদ্ধার কাজে লাগে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। বিশাখাপত্তনমের দক্ষিণ শহরতলির বেঙ্কটপুরের গোপালপত্তনম। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে বিষাক্ত গ্যাস ধোঁয়াশার মতো ঘিরে ফেলেছে গোটা এলাকাকে। রাস্তাঘাটে জ্ঞান হারিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছেন মানুষজন। গরু, কুকুরের অসাড় দেহও পড়ে রয়েছে তারই পাশে। ভোরের আলো ফোটার পরে গোটা এলাকায় দৌড়োদৌড়ি, চেঁচামেচি, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়ে যায়। গ্যাসের গন্ধ তখন আরও জোরালো। মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে। যেন সাড়ে তিন দশক আগে ভূপালে ঘটে যাওয়া সেই গ্যাস দুর্ঘটনাই আরও একবার ঘটে গেল। প্রশ্ন উঠেছে, নিছক অসাবধানতা নাকি কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, নাকি শুধুই দুর্ঘটনা! কীভাবে এত বড় বিপদ হল? বিষাক্ত গ্যাস পরিবেশে সঙ্গে অনেকটাই মিশে গিয়েছে। আট-দশ ঘণ্টা পর তার প্রভাব শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশাখাপত্তনম পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল।
তার মধ্যে সেই বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাব থেকে বাসিন্দাদের বাঁচাতে এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। তার ওপরে এ গ্যাস ছড়িয়েছে ভোর রাতে, সকলের ঘুমের মধ্যে। কারখানার মালিক সংস্থা দক্ষিণ কোরিয়ার ব্যাটারি নির্মাতা এলজি কেমিক্যাল লিমিটেডের তরফে বলা হয়েছে,কীভাবে ওই গ্যাস লিক হল এবং এর জেরে কত জনের মৃত্যু হয়েছে, কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সে সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছি।পুলিশ যে অভিযোগ করেছেন লক ডাউন এর সময় দেশের ওই জায়গায় রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি বলে তাও তারা সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন। এই গ্যাস কতটা বিষাক্ত: স্টাইরিনের কেমিক্যাল নাম ইথাইল বেঞ্জাইন। এটি একটি সিন্থেটিক, বর্ণহীন তরল।সাধারণত পলিমার দ্রব্য তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অল্প পরিমাণ এর গ্যাস নাকে গেলে মাথা ঘোরা, বমিভাব আসতে পারে। বেশি পরিমাণে শরীরে শ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করলে মৃত্যু হতে পারে। বিশাখাপত্তনমের পুর কর্পোরেশনের কমিশনার শ্রীজানা গুমল্লা জানিয়েছেন, দেশজুড়ে চলতে থাকা লকডাউনে বিধিনিষেধ খানিকটা শিথিল করার পরেই কয়েকদিন আগে এই প্ল্যান্টটি পুনরায় চালু করা হয়। এতদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ট্যাঙ্কের ভিতর রাসায়নিক বিক্রিয়া চলছিল। এর ফলেই ওই বিষাক্ত গ্যাস লিক করে বলে দাবি তাঁর। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর বিশাখাপত্তনামের সহকারী পুলিশ কমিশনার স্বরূপ রানি জানান তদন্তও তেমনটাই বলছে। একসঙ্গে প্রচুর পরিমাণ গ্যাস মজুত থাকায় বিক্রিয়া ঘটে এবং কোনও ভাবে বাইরে বেরিয়ে যায় গ্যাস। যদিও প্লান্টের মালিক এলজি চেম জানিয়েছেন, লকডাউনের কারণে ওই প্ল্যান্টটি বন্ধ থাকলেও ভিতরে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে কিছু কর্মী ছিলেন আগাগোড়াই। এখন সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখে তবেই আসল সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে কিন্তু বিশাখাপত্তনম শহরে বড় ক্ষতি হয়ে গেল। বিশাখাপত্তনমে গ্যাস লিক কাণ্ডের পরেই জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। এছাড়া অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারকে এ বিষয়ে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন তিনি।