দেশজুড়ে বিভাজনের রাজনীতি, পোশাক দেখে ধর্মের বিচার, খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ধর্মকে মিলিয়ে দেওয়া এই শব্দগুলি গত কয়েক মাসে ভীষণ চেনা হয়ে উঠেছে সকলের কাছে। এই মুহূর্তে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে উত্তাল পরিস্থিতি চলছে ভারতবর্ষকে। চারিদিকে সম্প্রীতি নষ্টের একটা বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এমন অশান্ত পরিবেশে অন্যরকম সম্প্রীতির বার্তা দিল কেরালার কায়ামকুলামের ইসলামিক অ্যাকাডেমি৷ ১৯ জানুয়ারি ওই মুসলিম অ্যাকাডেমিতেই এক হিন্দু মেয়ের বিয়ের আয়োজন করে সম্প্রীতির এক অনন্য বার্তা দিতে চলেছে তারা। মুসলিম অ্যাকাডেমির সদস্যরাই হিন্দু পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে বিয়ের আয়োজনে সহযোগিতা করছেন। তাঁরা ওই পরিবারকে সোনা এবং দু লক্ষ টাকাও দিচ্ছে। দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের এই পরিস্থিতিতে মুসলিম অ্যাকাডেমির উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রম বলেই মনে করছেন সকলে।
জানা গেছে, কায়ামকুলামে চেরাভাল্লি মুসলিম জামাত মসজিদের কাছেই ইসলামিক অ্যাকাডেমি অবস্থিত। চেরাভাল্লি মুসলিম জামাত কমিটির সম্পাদক ও একটি বিবাহ কেন্দ্রের মালিক নুজুমুদ্দিন আলুম্মুট্টিলের কাছে মেয়ের বিয়ের জন্য সাহায্য চেয়েছিলেন এলাকারই মেয়ে অঞ্জুর মা বিন্দুদেবী। তবে নুজুমুদ্দিন সাহেবের সঙ্গে ওই পরিবারটির পুরনো পরিচয় ছিল। বিন্দু দেবীর স্বামী অশোককুমার পেশায় স্যাঁকরা ছিলেন। কিন্তু আচমকাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। জমি বাড়ি বিক্রি করে কোনওরকমে তাৃর দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে সংসার চালান বিন্দুদেবী। একটি বেসরকারি সংস্থায় সাফাই কর্মী হিসেবে কাজ করেন।
বেতনের টাকায় ঘরভাড়া দিয়ে সংসারের খরচ চালাতে রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠে তাঁর। এই মুহূর্তে বিয়ের প্রস্তাব আসে অঞ্জুর। তখনই নুজুমুদ্দিন সাহেবের কাজে সহযোগিতার জন্য তিনি আবেদন করেন। সেই আবেদন পেয়ে ইসলামিক অ্যাকাডেমির সদস্যদের তিনি একথা বলেন। তার পরেই অবশ্য হিন্দু মেয়েটির বিয়ে দিতে সকলে উদ্যোগী হয়ে একপ্রকার ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আগামী উনিশে জানুয়ারি ইসলামিক অ্যাকাডেমিতে বসতে চলেছে বিয়ের আসর। বিন্দু দেবী জানিয়েছেন ওদের এই সাহায্য আমার কাছে ঈশ্বরের আশীর্বাদের মতোই। ওরা না থাকলে মেয়ের বিয়েটাই হয়তো দিতে পারতাম না। ওদের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।