খুনের অভিযোগে দুই কিশোরকে গ্রেপ্তার করার পরই ১১ দিন নিখোঁজ থাকা মেমারির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর দেহ উদ্ধার করল পুলিস। মেমারি থানারই পালশিটে ধৃতদের বাড়ি। বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়ি থেকে পুলিস তাদের গ্রেপ্তার করে। খুনের কথা ধৃতরা স্বীকার করেছে বলে পুলিসের দাবি। মোবাইলে গেম খেলা নিয়ে বিরোধের জেরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে তারা খুন করে বলে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছে পুলিস। ধৃতদের গ্রেপ্তারের পর শুভ মণ্ডলের(১৫) দেহ পালশিটের সেচ খালের পাশ থেকে উদ্ধার হয়। দেহটি ঘাসের জঙ্গলে পড়েছিল। শ্বাসরোধ করে শুভকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিস জেনেছে। ধৃতরা দু’জনই মেমারি থানার ভৈটা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েছে। তারা পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। ওই স্কুল থেকেই এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে শুভ। এদিন ধৃতদের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডের সামনে পেশ করা হয়। ধৃতদের উত্তর ২৪ পরগনার আড়িয়াদহ ধ্রুবাশ্রমে পাঠানোর নির্দেশ দেয় জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৭ মে বিকেল ৫টা নাগাদ বাড়ি থেকে সাইকেল ও মোবাইল নিয়ে বের হয় শুভ। তারপর থেকে তার হদিশ পাওয়া যাচ্ছিল না। শুভর বাবা-মা বেঙ্গালুরুতে থাকতেন। শুভর বাবা নির্মল মণ্ডল সেখানে রং মিস্ত্রির কাজ করতেন। আর মা সাগরিকা মণ্ডল বাড়িতে রান্নার কাজ করতেন। দিনকয়েক আগে তাঁরা মেমারির করন্দার বাড়িতে ফিরে আসেন। মামারবাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত শুভ। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়ে শুভর হদিশ না পেয়ে তার ঠাকুমা কিশোরী মণ্ডল মেমারি থানায় ১৮ মে নিখোঁজ ডায়েরি করেন। তার ভিত্তিতে অপহরণের মামলা রুজু করে পুলিস। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়েও পুলিস এতদিন শুভর হদিশ পায়নি। ধৃতরা তাদের এক বন্ধুর কাছে শুভকে খুন করার কথা জানায়। সেই বন্ধু শুভর সহপাঠী। সে শুভর খুন হওয়ার বিষয়টি কয়েকজনকে বলে। বিষয়টি পুলিসের কানে পৌঁছতেই পুলিস দুই কিশোরকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা শুভকে খুনের কথা স্বীকার করে।
পুলিসকে ধৃতরা জানিয়েছে, অনলাইন মোবাইল গেমে শুভর কাছে তারা বারবার হেরে যেত। মোবাইল গেমে জিতে শুভ তাদের হেয় করত। এতে দু’জনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা শুভকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন তারা শুভকে বাড়ি থেকে ডেকে পালশিটে বাঁকা নদীর ধারে যায়। সেখানে গল্প করার সময় আচমকা গামছা দিয়ে শুভর মুখ বেঁধে দেয়। এরপর অপর একটি গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাকে খুন করে। এরপর দেহটি টানতে টানতে সেচখালের পাশে ঘাসের জঙ্গলে ফেলে আসে। দেহটি শেয়ালে খেয়ে নেবে বলে ভেবেছিল দুই কিশোর।