লকডাউন উপেক্ষা করেই মেলা। জমায়েত হটাতে গিয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের বাধার মুখে প্রশাসন। পুলিশের সামনে বিডিওর সাথে বচসাই জড়িয়ে পড়লেন পঞ্চায়েত সমিতির কর্মধ্যক্ষ শ্যামলী ঘোষ। আর সাধারন মানুষ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করল। শাসকদলের এক নেত্রীর এই ধরনের কর্মীর কর্মকাণ্ড দেখে স্তম্ভিত সাধারণ মানুষ। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে গোঘাট ১ নম্বর ব্লকের নকুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের কোটা গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নকুন্ডা পঞ্চায়েতের কোটা গ্রামে লকডাউনকে উপেক্ষা করে চলছিল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্রশাসনের কাছে অভিযোগ আসে সরকারি নির্দেশকে পাত্তা না দিয়েই ব্যাপক জমায়েতের। বিষয়টি জানার পর এই এলাকায় পৌঁছায় গোঘাট থানার পুলিশ বাহিনীসহ গোঘাট ১ বিডিও সহ ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শ্যামলী ঘোষ বিডিওর সাথে বাকবিতন্ডা শুরু করেন। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ওই পঞ্চায়েত সমিতির কর্মধ্যক্ষ বিডিওকে বলছেন যদি নিয়ম করেই নাকি মেলা হচ্ছে। বিডিওর যদি ক্ষমতা থাকে তাকে গ্রেফতার করুক। এরপর বিডিও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মধ্যক্ষ শ্যামলী ঘোষকে জানতে চান আপনি মুখে মাস্ক ছাড়াই কেন মেলায় এত জমায়েতে এসেছেন, যেখানে রাজ্য সরকার মাস্ক বাধ্যতামূলক করেছে করোনা পরিস্থিতিতে। সেই জায়গায় কেন তিনি সরকারি নিয়মকে পাত্তা দিচ্ছেন না। এ বিষয়ে আরামবাগের মহকুমাশাসক নৃপেন্দ্র সিং বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। ভিডিও ফুটেজ দেখে সমস্ত কিছু স্পষ্ট নয়। সবকিছু খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে শ্যামলী ঘোষকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন না তোলাই তার কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
একজন তৃণমূল নেতৃত্বের এহেন কর্মকান্ডকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। আরামবাগ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষ বলেন, যে ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে তাতে স্পষ্ট মানুষের ভালো কোনদিন চাইনি তৃণমূল। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দেশের প্রধানমন্ত্রী মানুষকে করোনা মোকাবিলায় গৃহবন্দী থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন সেই জায়গায় সরকারি নিয়মকে তা দিয়েই এত বড় একটি মেলা হচ্ছে। আর জমায়েত ঠেকাতে গিয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের রোষের মুখে পড়তে হচ্ছে বিডিওকে। আসলে মানুষের ভালো কোনদিনই চাইনি তৃণমূল না হলে বিডিওকে এত রাতে গিয়ে মেলা বন্ধ করতে হত না। অন্যদিকে এদিনের পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিমানবাবু। তার দাবি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায়। যেখানে লকডাউন জারি রাখতে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করছে সে জায়গায় এখানে দেখা গেল কর্মাধ্যক্ষ শ্যামলী দেবী জমায়েত লাগু রাখতে একপ্রকার বদ্ধ পরিকর। তা নিয়ে বিডিওর সাথে তর্ক-বিতর্ক করছেন তৃণমূল নেত্রী। সে জায়গায় পুলিশ কেন কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করল না? আসলে পুলিশ তৃণমূলের দলদাস বলেও ক্ষোভ উগরে দেন বিমান ঘোষ।
এ বিষয়ে গোঘাট ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নারায়ণচন্দ্র পাঁজা বলেন, শ্যামলী যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা সম্পূর্ণ দল বিরোধী ও মানুষ বিরোধী। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মানুষকে গৃহবন্দী থাকার আর্জি জানাচ্ছেন সেই জায়গায় এই কাজ অত্যন্ত নিন্দাজনক। এই কাজ দল কোনওভাবেই বরদাস্ত করবে না। দল বিরোধী কাজের জন্য বিধায়ক তথা তৃণমূল কংগ্রেসের বিধানসভার চেয়ারম্যান মানস মজুমদারের সাথে কথা বলে দলগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে আইনানুগ পথে হাঁটবে তারা দলের ভাবমূর্তি কোনওভাবেই নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।
সবমিলিয়ে এই ঘটনায় তীব্র নিন্দার ঝড় এলাকাজুড়ে। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, এই ঘটনায় ৩ জনকে পুলিশ আটক করে। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছেন ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ যা করলেন তার বিরুদ্ধে কেন পুলিশ ও প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিরোধীরা বলছেন, শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকা কারণেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল না পুলিশ ও প্রশাসন। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি লকডাউন জারি রাখতে পুলিশকে কড়াকড়ি হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সেই জায়গায় কেন গোঘাট পুলিশ এক্ষেত্রে নীরব তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।