জেলা

স্বামী চিনল হাতের উল্কিতে, স্ত্রী চিনল পায়ের কড়া দেখে, করোনা আতঙ্ক ২১ বছর পর মিলিয়ে দিল বার্নপুরের দম্পতিকে

আপনার স্বামীর নাম কি সুরেশ প্রসাদ, দিল্লিতে কাজ করেন? সাত সকালে বাড়ি বয়ে এসে পুলিসের এই প্রশ্ন শুনে হতবাক হয়ে যান ২১বছর ধরে স্বামীর পথ চেয়ে বসে থাকা বার্নপুরের বাসিন্দা উর্মিলা প্রসাদ। পুলিসের কাছে যখন শোনেন তাঁর স্বামী আসানসোলে ফিরে এসেছেন তখন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। নিজের নামের উল্কি স্ত্রীর হাতে দেখে ঘরোনীকে চিনলেন স্বামী, স্বামীর পায়ের কড়া দেখেই নিজের মনের মানুষকে চিনে নিলেন স্ত্রী। ২১ বছর পর করোনা আতঙ্কই ফের মিলিয়ে দিল বার্নপুরের দম্পতিকে। স্বামী-স্ত্রীর মিলনের সাক্ষী রইল আসানসোলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। স্ত্রী-পুত্রকে ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় ছোট ছেলের বয়স ছিল ২। এখন সেই শিশুই ২৩ বছরের যুবক। পুত্রকে এতদিন পর চোখের দেখা দেখে অশ্রু চেপে রাখতে পারেনি বৃদ্ধ। বহু মন্দিরে মাথা ঠুকেও ফিরে আসেনি হারিয়ে যাওয়া স্বামী। এই মারণ ভাইরাস ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই করোনাকেই ধন্যবাদ দিচ্ছেন প্রৌঢ়া উর্মিলা প্রসাদ। তবে, প্রশাসনের নিয়মে এখনই বাড়ি ফিরছেন না দিল্লি ফেরত বৃদ্ধ। তাঁর নমুনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই ফিরবেন। কিন্তু বাবাকে কাছে পেয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে উদগ্রীব ছেলে। অভিমান ভুলে স্ত্রীও আর এক মুহূর্ত স্বামীকে চোখের আড়াল হতে দিতে চান না।

বৃহস্পতিবার আসানসোলের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে এসে সুরেশবাবুর পায়ের কড়া দেখে নিজের স্বামীকে চিনতে পেরে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী। সুরেশবাবুও সেই মুহূর্তেই লক্ষ্য করেন, দু’দশক আগে একটি মেলায় স্বামীর নাম খোদাই করা উল্কি আজও অক্ষুন্ন উর্মিলাদেবীর বাঁ হাতে। উর্মিলাদেবীর দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে বার্নপুরের শ্যামবাঁধে সংসার করছিলেন। হঠাৎই একদিন পারিবারিক অশান্তির জেরে স্বামী বাড়ি ছেড়ে চলে যান। বহু খোঁজাখুজির পরও তাঁর হদিশ মেলেনি। মন্দিরে মন্দিরে স্বামীর নামে পুজো দিলেও ফিরে আসেনি। এক সময়ে চোখের জল শুকিয়ে যায়।

চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে মানুষ করতে থাকেন সন্তানদের। প্রথমদিকে শ্বশুর সংসার খরচ চালালেও তাঁর মৃত্যুর পর ১০বছর বয়সে নারকেল ফেরি করে সংসার চালিয়েছেন সুধীর। তারই মাঝে উর্মিলাদেবীর বড় ছেলের মৃত্যু হয়। আট বছর আগে একটি মাত্র চিঠি এসেছিল দিল্লি থেকে। সেখানে লেখা ছিল ‘আমি ভালো আছি, আমাকে খোঁজার চেষ্টা করো না। বহু অভিমান জন্মেছিল স্ত্রীর মনে। ঠিক করেছিলেন ফিরে এলেও স্বামীর সঙ্গে কথা বলবেন না। কিন্তু এক মুহূর্তে সব অভিমান ভেসে গিয়েছে ভালোবাসার স্রোতে।

Loading

Leave a Reply