সিএএ এবং এনআরসি ইস্যুতে সারারাজ্য সর্বোপরি দেশজুড়ে ধর্ম নিয়ে চলছে চর্চা। চরম এই ডামাডোলের মুহূর্তে সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়ল আরামবাগের নৈসরাই এলাকার সংখ্যালঘু বেশ কয়েকজন যুবক। মৃত এক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের সৎকাজের জন্য এগিয়ে এল বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা। দোকানে দোকানে, অ্যাম্বুলেন্স চালকদের কাছে গিয়ে ওই মৃত ব্যক্তির সৎকাজের জন্য আর্থিক অনুদান চাইল তারা। সংখ্যালঘু ওই ব্যক্তিদের কর্মকান্ড দেখে স্বাভাবিকভাবেই আশ্চর্য হয়েছিলেন স্থানীয়রা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আরামবাগের এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে লরির ধাক্কায় নবকুমার সর্দার নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পেশায় দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি। বাড়িতে ১১ বছর ও ৬ বছরের ২টি মেয়ে এবং ৫ বছরের একটি ছেলে রয়েছে তার। স্ত্রী পুতুল সর্দার অন্যের বাড়িতে কাজ সংসার চালাতেন। হঠাৎ করে স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় একেবারে দিশাহীন হয়ে পড়ে পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবারের অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে ছিল মৃত নবকুমারের সৎকাজ করার আর্থিক সামর্থ্য ছিলনা পরিবারের। বিষয়টি জানার পর এগিয়ে আসে মীর চঞ্চল, ইমরান খান, শুকুর আলী মিঞা, আসিফ আলি খান, আব্দুল হালিম খান ও জাকির হোসেনরা। তাদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি সৎকাজের জন্য আর্থিক অনুদানের জন্য আরামবাগ শহর ও নৈসরাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেন তাঁরা। এই উদ্যোগের প্রধান উদ্যোক্তা মীর চঞ্চল বলেন, পরিবার একেবারে দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থিত। মৃতের সৎকাজ করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই পড়শী ওই ব্যক্তির মৃতদেহ সৎকারের জন্য দোকানে দোকানে গিয়ে তারা অনুদান চাইলেন। মোট ৩৭০০ টাকা অনুদান মিলেছে। এতে করে সৎকাজের কাজটা সম্পন্ন করা যাবে এর মাধ্যমে তারা দেখাতে চাইলেন এ বাংলা সম্প্রীতির বাংলা। এখানে জাতপাত বড় নয়, মানুষ মানুষের জন্য এই কথাকে বাস্তবায়িত করে তোলার জন্যই এই উদ্যোগ।
এদিনের এই দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে মির চঞ্চলের মূলত অভিযোগ, রাস্তা বেহাল দশার দরূন ৮ টি প্রান আকলে চলে গেছে ১ মাসের মধ্যে। প্রশাসনের এ বিষয়ে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করা উচিত।
অন্যদিকে, মৃত নবকুমারের দাদা হারু সর্দার বলছেন, পেশায় দিনমজুরের কাজ করত সে। হঠাৎ করে তার ভাই এভাবে মারা যাওয়ায় দিশাহীন পরিবার। তবে স্থানীয় বেশ কয়েকজন সংখ্যালঘু মানুষ তার ভাইয়ের সৎকাজের জন্য এগিয়ে এসেছেন, এতে কিছুটা হলেও ভালো লাগছে।