পরিযায়ী শ্রমিক হওয়া যেন অপরাধ। হাসপাতাল থেকে সুস্থ সাটিফিকেট নিয়ে হোম কোয়ারেন্টানে থাকার কথা বললেও,অনুমতি মিলছে না পাড়ার লোকের কাছে। থানায় গেলে বলে দেওয়া হচ্ছে পাড়ার লোক ঢুকতে না দিলে তাদের কিছু করার নেই। এলাকার কাউন্সিলরও কোনও কিছুই শুনতে চাইছে না। আর কাউন্সিলার একধাপ এগিয়ে বলছেন এটাও নাকি বিরোধীদের চক্রান্ত। উপায় অন্তহীন হয়ে রাত কাটছে রাস্তায়। অসহায় মানুষরা পেটের জন্য কাজে গিয়ে আটকে পড়েছিল লকডাউনে। ফিরতে পারলেও ঘরে ঢোকা হচ্ছে না তাদের। এযেন এক নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছে এই সমাজ।
চুঁচুড়া ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের গঙ্গাতলার বাসিন্দা সোমা পড়ুয়া। মঙ্গলবার রাজগীর থেকে হাওড়া ফেরেন স্পেশ্যাল ট্রেনে। হাওড়া থেকে চুঁচুড়া আসার পর তিনি সোজা চলে যান চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। সেখানে স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর হাসপাতালের তরফে তাঁকে ১৪ দিনের হোম কোরেন্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর এতেই বিপত্তি। বাড়ির মালিক সাফ জানিয়ে দেন, কোনওমতেই তাঁকে এই বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বেঁকে বসেন পাড়ার লোকেরাও। পরিযায়ী তকমায় সোমাদেবী পরিস্থিতি বুঝতে পেরে চলে আসেন স্থানীয় কাউন্সিলরের কাছে, সাহায্যের আশায়। সাহায্য তো দূর অস্ত্র, সোমাদেবীর কথা শুনতেও রাজি হননি স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর। ঘটনাটিকে চক্রান্ত বলে তাকে এখান থেকে চলে যেতে বলেন। এরপর সোমাদেবী থানায় যান সাহায্যের আর্জি নিয়ে। চুঁচুড়া থানাও তাঁকে কোনরূপ সাহায্য করেন নি বলে দাবি তাঁর। ভিন দেশের মাথার ওপরের ছাদ ছেড়ে, নিজ দেশে এসে পথে পথে ঘোরা ছাড়া কোনো রাস্তায় অবশিষ্ট থাকল সোমাদেবীর কাছে। অবশেষে রাতে অসহায় হয়ে একাকী ওই মহিলা পথেই থাকার সিদ্ধান্ত নেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিষয়টি জানানো পর, তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এক মহিলা, পেটের দায়ে করোনা সংক্রমিত না হয়েও, সমাজের এক ঘৃণ্য রোগের স্বীকার হয়ে এক করুণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হল। যা এক কথায় বিরল ও নজিরবিহীন বলেই মনে করা হচ্ছে।