আরামবাগ জেলা ফিচার রাজ্য

১২ বছরের শিশুর এক হাতে খাতা বই, অন্য হাতে আশ্চর্য জাদু মায়া

নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ

হাতে থাকে বই, খাতা আর পেন,সেই হাতেই ফুটে ওঠে সৃষ্টির জাদু। আরামবাগের বড় ডোঙ্গল গ্রামের ক্লাস সিক্সের ছাত্র নীল পাল যেন এক বিস্ময়। মাত্র ১২ বছর বয়সে তার হাতে ধরা পড়েছে এক আশ্চর্য মায়া। যে হাতে একসময় বইয়ের পাতায় আঁকা হত ছোট ছোট ছবি, আজ সেই হাতেই প্রাণ পায় দেবীস্বরূপা মা কালী।নীলের তৈরি প্রতিমা এখন গ্রামের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে পার্শ্ববর্তী মণ্ডপে। এবারের কালীপুজোয় তার ব্যস্ততা তুঙ্গে। গত বছরের তুলনায় অর্ডার বেড়েছে দ্বিগুণ। একাই তৈরি করেছে কুড়িটি কালী প্রতিমা। কোথাও শেষ হয়েছে রঙের কাজ, কোথাও চলছে দু’মেটে দেওয়ার ধাপ। ঠাকুর গড়া থেকে রং করা, সবটাই নিজের হাতে করে নেয় এই খুদে শিল্পী। শুধু চোখ আঁকার সময় একটু সাহায্য লাগে, তখন পাশে দাঁড়ান জেঠু সন্টু পাল, বাবা ও দাদু। তিন প্রজন্ম মিলে যেন এক শিল্পী পরিবার। নীলের শিল্পীসত্তার শুরু খুব অল্প বয়সে। রঙ আর মাটির প্রতি এক অজানা টান ছিল তার। কাগজে পেনসিলের আঁচড়ে ফুটে উঠত জীবন্ত চিত্র। সেই সৃজনশীলতাই একদিন তাকে নিয়ে আসে মাটির মূর্তির জগতে। জেঠুর পাশে বসে দেখত, কীভাবে মাটির দলা থেকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে দেবী প্রতিমা। একদিন নিজেই হাতে তুলে নেয় মাটি আর সরঞ্জাম। প্রথমবার বানায় সরস্বতীর প্রতিমা, আর সেই প্রতিমাই এনে দেয় তাকে স্কুল ও প্রতিবেশীদের প্রশংসা। সেই উৎসাহেই শুরু হয় এক নতুন পথচলা শিল্পীর পথ। এখন স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিমা গড়াই তার ভালোবাসা, তার নেশা। সকাল-বিকেল বই আর খাতার ফাঁকে যতটুকু সময় পায়, ততটুকুতেই মাটিকে প্রাণ দেয় সে। নীলের চোখে প্রতিমা গড়া মানেই শুধু কাজ নয়, এক ধরণের সাধনা। নিজের হাতে গড়া মূর্তি যখন রঙে রঙে জীবন্ত হয়ে ওঠে, তখন যেন সে নিজেও ছুঁয়ে যায় দেবত্বের পরশ।

 

নীলের জেঠু সন্টু পাল বলেন, ভাইপো এখনো আমার কাছেই শিখছে। কিন্তু এখন এমন ঠাকুর গড়ে ফেলছে যে, আমার অনেকটাই কাজের চাপ কমে গেছে। এই বয়সে ওর হাতের নিপুণতা দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়।

 

গ্রামের মানুষজনও আজ নীলের প্রতিভায় মুগ্ধ। অনেক মণ্ডপ থেকে অর্ডার আসে তার নামে। কেউ কেউ আগেভাগেই বুকিং দিয়ে রাখেন, যেন তাদের পুজোর মূর্তি নীলই গড়ে দেয়। আর তার প্রতিমা যেমন সুন্দর, তেমনি নিখুঁত ও সুনিপুণ। প্রতিটি মূর্তিতেই ধরা পড়ে তার নিষ্ঠা, ভালোবাসা ও সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া।

 

ছোট্ট হাতের স্পর্শে যেন মাটিও পায় প্রাণ। এই প্রতিভাবান খুদে শিল্পীর হাতেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের এক উজ্জ্বল শিল্পীর প্রতিশ্রুতি যে একদিন হয়তো নিজের গ্রাম, নিজের আরামবাগের নাম পৌঁছে দেবে অনেক দূর, শিল্পের আলোকিত মঞ্চে।

Loading

Leave a Reply