দেশ

মোদির আলো নেভানোর সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে বড়সড় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের আশঙ্কা

দেশজুড়ে হতে পারে বিরাট রকমের বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এমনকি অর্থনৈতিক দিক থেকেও বেশ বড় ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মোদির এইরূপ সিদ্ধান্তে সমগ্র ভারতে বিদ্যুৎ দপ্তর একপ্রকার ভয়ংকর ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সে কারণে আপনারা লাইট বন্ধ করলেও ঘরে থাকা সমস্ত ফ্যান এবং সম্ভব হলে এসি, ফ্রিজ সহ এই সমস্ত কিছু হাই ভোল্টেজের জিনিসপত্রগুলি অন করে রাখুন। সকলের সহায়তায় হয়তো বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়ানো যেতে পারে । রবিবার রাত ৯টায় দেশজুড়ে ৯ মিনিটের জন্য সব লাইট বন্ধ করে মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালিয়ে করোনা মোকাবিলায় মহাশক্তি জাগিয়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু দেশজুড়ে আচমকা এই এত পরিমান আলো নেভালে ও জ্বালালে তার প্রভাবে ভারতে গ্রিড বিপর্যয় হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে স্টেট লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার ( এসএলডিসি )। এই ঘটনার ফলে দেশে ব্ল্যাকআউট হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এই বিপর্যয় এড়াতে দেশবাসীকে ফ্যান চালিয়ে রাখার পরামর্শ দিলেন নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর এম কে মাথুর।

দেশবাসীর উদ্দেশে এক বার্তায় মাথুর জানিয়েছেন, “রবিবার রাত ৮.৫৫ মিনিট থেকে ৯.১০ মিনিট পর্যন্ত অর্থাৎ ১৫ মিনিট ফ্যান এবং লাইট অফ্ রাখলেও বাকি সমস্ত বৈদুতিক যন্ত্র গুলি সচল রাখুন। তাহলে আলো নেভালেও বিদ্যুতের ঘাটতি খুব বেশি হবে না। ফলে গ্রিড বিপর্যয় রোখা যেতে পারে।” নিউক্লিয়ার পাওয়ার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের কিছু ইঞ্জিনিয়ার এই সময় এসি বা ফ্রিজ চালিয়ে রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন। তাহলে বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় থাকবে বলেই তাঁদের মত।

এর আগে এসএলডিসি-র কর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর কথা মতো যদি রবিবার রবিবার রাতে ৯টায় দেশের সব বাড়ির আলো নিভে যায় তাহলে বিদ্যুতের চাহিদায় বিরাট ঘাটতি দেখা দেবে। ভারতে গ্রিডগুলির ক্ষমতা হল ৩৭০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ ধরে রাখার, সাধারণত বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ১৫০ গিগাওয়াট। কিন্তু বিদ্যুতের চাহিদায় ঘাটতি দেখা গেলে অতিরিক্ত বিদ্যুতের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যাবে। ফলে পাওয়ার গ্রিডের উপর চাপ পড়বে। আবার ৯ মিনিট পরে যখন সব বিদ্যুৎ একসঙ্গে জ্বলে উঠবে তখন সেই চাহিদার জোগান দিতে গিয়ে পুরো সিস্টেমটাই ভেঙে পড়তে পারে। ফলে একাধিক বড় রাজ্যে ব্ল্যাকআউটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশের মতো একাধিক রাজ্য ঠিক করেছে বিদ্যুতের এই চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য রাখার জন্য রবিবার রাত ৮টা থেকে রাজ্যজুড়ে লোডশোডিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সময় ধীরে ধীরে গোটা রাজ্যে লোডশেডিং করে তারপর আবার রাত ৯টা ৯ মিনিটের পর থেকে তা ফিরিয়ে আনা হবে। এছাড়াও এই ৯ মিনিট দেশের সব বিদ্যুৎ সংস্থাকে সতর্ক থাকার কথা বলেছে পাওয়ার সিস্টেম অপারেশন কর্পোরেশন লিমিটেড।

শুক্রবার পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড-এর কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী আর কে সিংহ। বলে দেওয়া হয়েছে, ৫ এপ্রিল রাত্রি নটার সময় ওই নির্দিষ্ট সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যদি কোনও রকমের অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তাহলে ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন অ্যাসেস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ওই সময়ে স্টেশন ইনচার্জ ও আধিকারিকরা যেন কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত থাকেন।

মোদীর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা শশী থারুর থেকে শুরু করে জয়রাম রমেশ। এমনকি মহারাষ্ট্রের বিদ্যুৎমন্ত্রী নিতীন রাউতও এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য,পুরো দেশে ব্ল্যাকআউট হয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে তার প্রভাব পড়তে পারে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপরেও। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের সমগ্র দেশের বিদ্যুৎ পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটতে পারে এবং বড় সমস্যা হতে পারে।কারণ, লক ডাউনের কারণে দেশজুড়ে বিভিন্ন কারখানা, হোটেল, রেস্তোরাঁ বন্ধ। ফলে এমনিতেই বিদ্যুতের চাহিদা কম। তাই বিদ্যুৎ বাড়তি রয়েছে। এই অবস্থায় যদি ফের বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায় তাহলে এই ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। তার ফল খুব খারাপ হতে পারে বলেই আশঙ্কা।

Loading

Leave a Reply