ফিচার বিশ্ব

দূষণমুক্ত পৃথিবীতে প্রাণ ফিরছে প্রকৃতির, পুরু হচ্ছে ওজনস্তর

সমগ্র বিশ্বের মানুষ যখন করোনাভাইরাসের ভয়ে থরথর করে কাঁপছে তখন প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে নিজের ছন্দে। কখনো দেখা যাচ্ছে প্রকৃতির পশুপাখিরা খেলে বেড়াচ্ছে নির্ভয়ে। যখন প্রকৃতিকে মানুষ এক প্রকার নিগ্রে নিয়েছে তখনই প্রকৃতি তার স্বাভাবিক ছন্দ ফেরানোর জন্য নিজেই প্রস্তুত হয়ে উঠেছে। মানুষ কাঁপছে করোনা ভয়ে আর প্রকৃতি পৃথিবী কে আবার গুছিয়ে নিচ্ছে সকলের জন্য। মানুষ বন্দি করেছিল প্রকৃতির জীব দের। অার অাজ মানুষই বন্দি। পৃথিবীর উপরে ওজোন স্তরের বলায়ে ফুটো দেখা দিয়েছিল কিছুদিন ধরেই। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছিলেন পৃথিবীর অস্তিত্ব নিয়ে। কিন্তু প্রকৃতি নিজেই তার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে অবিচল। সহজ ভাষায় ওজোনস্তরের কাজ হলো সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি অাটকানো। যাতে পৃথিবীতে এই রশ্মি না ঢোকে। এই রশ্মি পৃথিবীর প্রাণী জগতকে বিনষ্ট করে দিতে পারে। অতিবেগুনি রশ্মি থেকে মানুষের ক্যান্সার জাতীয় বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা যেরে সমগ্র বিশ্বের মানুষ যখন গৃহবন্দী তখন দূষন এর মাত্রা বেশ অনেকটাই কমে গেছে সমগ্র পৃথিবীতে। আর সে কারণেই ওজোনস্তরের ছিদ্র ধীরে ধীরে পুরো হতে শুরু করেছে।




এমনকি ওজনোস্তর পাতলা হয়ে গিয়েছিল বলে জানাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চলেছে এই স্তর। মানুষ শোষণ করে গেছে প্রকৃতিকে। আর প্রকৃতি তার জবাব দিয়েছে। মহামারীর ফলে সমগ্র বিশ্বের মানুষ থর থর করে কাঁপছে আর ঠিক তখনই প্রকৃতি নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছে নিজের ছন্দে। উল্লেখ্য কোভিড সংক্রমণের এই পর্যায়ের আগেই থেকে উত্তর গোলার্ধের ওজোন স্তরের এই ছেঁদা নজরে আসে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA)। বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রায় ১০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের এই ছিদ্র ব্যতিক্রমী ঘটনা। এর কারণে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে পৃথিবীর। কোপারনিকাস অ্যাটমসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস (CAMS) এবং কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (C3S)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, এই ওজোন স্তরের এই ক্ষত নিজে থেকে সেরে গেছে। আশঙ্কার আর কোনও কারণ নেই। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ও কোপারনিকাস অ্যাটমসফিয়ার মনিটরিং সার্ভিস জানিয়েছে, ওজোন স্তরে এই ক্ষতের জন্য দায়ী ছিল মানুষের তৈরি দূষণ এবং তার কারণে সৃষ্ট জলবায়ুর পরিবর্তন। শিল্প-কলকারখানা ও আধুনিক জীবনের সুবিধা নিতে গিয়ে ওই পাতলা চাদরটি ফুটো করে ফেলেছে মানুষ। উত্তর ও দক্ষিণ, দুই মেরুতেই ছেঁদা হয়ে গিয়েছে ওজ়োনের স্তর। ওজোন স্তরের বেহাল অবস্থার জন্য দায়ী ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (সিএফসি),ব্রোমিন, ক্লোরিন গ্যাস, মিথাইল ক্লোরোফর্ম, মিথাইল ব্রোমাইড, হাইড্রোব্রোমোফ্লোরোকার্বন, হাইড্রোফ্লোরোকার্বন ইত্যাদির উৎপাদন ও ব্যবহার। গত কয়েক দশকে বাতাসে এই সব গ্যাসের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে ওজ়োন স্তরের ছিদ্রও। যার প্রভাব পড়েছে জীবজগতে। দূষণের ফলে বাড়তে থাকা উষ্ণায়ণ বদল এনেছে জলবায়ুতে। বিজ্ঞানীরা বলছেন ওজোন স্তরের এই ক্ষত মেরামতির আরও একটা কারণ আছে।



উষ্ণ ও শীতল বায়ুর সংঘাতে তৈরি মেরু ঘূর্ণাবর্ত (Polar Vortex) সিএফসি গ্যাসের সঙ্গে মিশে এমন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারিক মেঘ তৈরি করে যা ওজোনের পর্দাকে দুর্বল করে দেয়। এই সিএফসি গ্যাসের পরিমাণ কমায় ঘূর্ণাবর্তের ক্ষমতাও অনেক কম। উষ্ণ ও শীতল বায়ুর সংঘাত হলেও তার সঙ্গে রাসায়নিক গ্যাস মিশছে না, ফলে ওজোন স্তরের ক্ষতিও সেভাবে হচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জৈব ও রাসায়নিক দূষণের দাপট কমায় ক্লোরোফ্লুরোকার্বন কম নির্গত হচ্ছে বাতাসে। যার প্রভাব পড়েছে জলবায়ুতেও। ফলে ধীরে ধীরে সেরে উঠেছে ওজোন স্তরের ক্ষত। এই সিএফসি গ্যাসের পরিমাণ কমানোর জন্য ১৯৮৭ সালে গোটা বিশ্ব একসঙ্গে মন্ট্রিয়ল চুক্তি সই করে। সিএফসি-র ব্যবহার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০০ সাল থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ বর্গকিলোমিটার পরিমাণ কমেছে ওজোনের ফুটো।


Loading

Leave a Reply