দেশ রাজ্য

৭ দিনের মধ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর নির্দেশ

অাশার অালো পারিযাই শ্রমিকদের। অাবশেষে বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়ে দিল ভিন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিক, পর্যটক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ নিজ রাজ্যে ফেরাতে পারবে রাজ্য সরকার ৭ দিনের মধ্যে। যাদের শরীরে করোনা নেই তাদের নিজের রাজ্যে ফিরিয়ে অানা যাবে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে ভিন রাজ্যে আটকে থাকা মানুষজন একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছিলেন। বিভিন্ন সময় ফোন আসছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এবং সহায়তার জন্য বিভিন্ন নেতা-নেত্রীদের সাথে যোগাযোগ করেছিল তারা। সমগ্র পৃথিবীর সাথে ভারতবর্ষে এই পরিস্থিতিতে ভিন রাজ্যে আটকে থাকা মানুষরা বিশেষ করে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়নি তারা বাড়ি ফিরতে চাইছিল। কিন্তু বাড়ি ফিরতে পারছিল না। এরকম সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে বাড়ির লোক অত্যন্ত চিন্তায় প্রহর গুনছিল। এমনকি সুপ্রিম কোর্টে তাদের বাড়ি ফেরানোর জন্য বেশ কয়েকটি দাবিও জানানো হয়। অবশেষে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে সাত দিনের মধ্যে ওই সমস্ত পরিযায়ী মানুষদের যে যা রাজ্যে ফেরত নেওয়ার জন্য। তার জন্য সমস্ত রকম প্রস্তুতি নিয়ে কিভাবে তাদের বাড়ি ফেরানো যায় সেটিও পর্যালোচনা করে দেখার কথা বলেছেন কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই ঘোষণার পরই সমস্ত বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই বলছেন মুখ্যমন্ত্রী যেন এই পারিজায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য তৎপর হন। বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা মানুষজন অসহায় অবস্থায় দিন গুনছে। তারা আরো বলেন রাজ্যে যেহেতু কর্মসংস্থান কম সেহেতু অন্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষজন ভিন রাজ্যে আটকে পড়েছেন সর্বাধিক।




কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জানিয়ে দেন যে সমস্ত মানুষ আটকে আছে তাদের কোভিড ১৯ টেস্ট করে তারপর নিজ নিজ রাজ্যে ফেরানোর জন্য। যে সমস্ত শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে আটকে পড়েছেন তাদের এমনই দুর্বিষহ অবস্থা যে দুবেলা-দুমুঠো খাবারও জুটছে না। নির্ধারিত বাসে করে ওই পারিজায়ী শ্রমিকদের ফেরানো হবে বলে জানা যাচ্ছে। তবে ওই শ্রমিকরা বাসে ওঠার আগে বাস পুরোপুরি স্যানিটাইজার করে তারপরে বাসে উঠানো হবে এবং শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, “মুর্শিদাবাদ ও মালদহ থেকে হাজারে হাজারে শ্রমিক ভিন রাজ্যে আটকে রয়েছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েকশ করে ফোন পাচ্ছি তাঁদের। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এঁদের অনেকের থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। স্থানীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলে অনেকের রেশনের ব্যবস্থাও করেছি। রাজ্য সরকারের উচিত কোনও সময় নষ্ট না করে আজ রাত থেকেই এ ব্যাপারে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দেওয়া”।অন্যদিকে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “বাংলার সরকারের মতিগতি বোঝে কার সাধ্য! প্রথমে বলে দিয়েছিল কোটায় আটকে পড়া ছাত্রছাত্রীদের ফেরাতে পারবে না। এতটাই স্পর্শকাতরতাহীন এই সরকার। তার পর যখন দেখল রাজস্থান সরকার বাংলায় পৌঁছে দিতে চাইছে, তখন রাজি হল। যাক দেরিতে হলেও শেষমেশ যে হচ্ছে এটাই ভাল লক্ষণ।” তাঁর কথায়, “কেন্দ্র অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। এবার ভিন রাজ্যে আটকে থাকা সুস্থ শ্রমিকদের সাত দিনের মধ্যে ফিরিয়ে আনুক রাজ্য। রাজ্যের যে শ্রমিকরা অন্য রাজ্যে পেটের তাগিদে যায় তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারের আবেগ, অসহায়তাকে সম্মান দিক বাংলার সরকার। কেন্দ্র সব রকমের সাহায্য করতে তৈরি আছে”।



তিনি আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার অনেক কিছু নিয়ে রাজনীতি করেছে। এবার এটা নিয়ে যেন না করে। আমরা দাবি করছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনা হোক”। তবে বাড়ির লোক যেমন দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছেন তেমনই ভিন রাজ্যে অাটকে পড়া মানুষ যেন অনেকটা স্বস্তি অনুভব করছেন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে। তবে এখন সমস্যা বাড়ি আসার পর বাড়ির লোকজন খুশি হলেও এলাকার মানুষজন তা সঠিক ভাবে নেবে কিনা এবং প্রশাসন তা যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন কিনা সেটাই দেখার। মুখ্যমন্ত্রী কত দ্রুত এই মানুষদের বাড়ী ফেরার ব্যবস্থা নেন সেদিকেই তাকিয়ে আছেন এই অসহায় মানুষগুলি। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন বাসের সাথে যদি অল্প কিছু ট্রেনের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে হয়তো বেশ কিছুটা সুবিধা হত।


Loading

Leave a Reply