আরামবাগ

প্রায় দেড় দশকের জট কাটিয়ে ভাবাদিঘিতে রেলের কাজ শুরু

প্রায় দেড় দশক ধরে থমকে থাকা তারকেশ্বর–বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্পে অবশেষে গতি ফিরল। মঙ্গলবার সকাল থেকে হাইকোর্টের নির্দেশে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় শুরু হলো ভাবাদিঘি এলাকায় রেল লাইনে মাটি ফেলার কাজ।প্রায় দেড় দশকের জট কাটিয়ে ভাবাদিঘিতে রেলের কাজ শুরু এই কাজ শুরু হওয়ায় বহু বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটল বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

প্রকল্পের সূচনা ও জটের সূত্রপাত ২০০০ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন তারকেশ্বর থেকে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত ৮২ কিমি দীর্ঘ রেল প্রকল্পের। ২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজও শুরু হয়। কিন্তু ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে গোঘাটের ভাবাদিঘি এলাকায় গড়ে ওঠা জটিলতার কারণে গোঘাট থেকে কামারপুকুর পর্যন্ত মাত্র ৫ কিমি রেললাইনের কাজ আটকে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি ছিল, ৫২ বিঘা আয়তনের ঐতিহাসিক দিঘি বাঁচিয়ে রেললাইন তৈরি করতে হবে। এই দাবিকে কেন্দ্র করেই দীর্ঘ আন্দোলন ও মামলার সূত্রপাত হয়।

২০১২ সালে তারকেশ্বর থেকে আরামবাগ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ভাবাদিঘির জট না কাটায় প্রকল্প কার্যত থমকে যায়। এরপরের এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একাধিকবার রেল কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। আন্দোলনকারীরা টিকিয়ে রেখেছিলেন তাঁদের অবস্থান, অন্যদিকে যাত্রী পরিষেবা শুরু করতে না পারায় ক্ষোভ জমতে থাকে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

আদালতের নির্দেশ ও নতুন পদক্ষেপ দ্রুত রেল চালুর দাবিতে ‘কামারপুকুর রেল চাই’ পক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু নানা জটিলতা ও প্রশাসনিক টালবাহানায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ এগোয়নি। অবশেষে ৩ সেপ্টেম্বর ফের রায় দেয় হাইকোর্ট, যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করতে হবে।

৮ সেপ্টেম্বর রেল কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করতে গেলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন। তাঁদের দাবি ছিল, আদালতের রায় ওয়েবসাইটে আপলোড না হলে কোনও কাজ করা যাবে না। অবশেষে ৯ সেপ্টেম্বর রায় আপলোড করা হয়। তার পরের দিনই অর্থাৎ ১০ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ফের মাঠে নামে রেল।

রাজনৈতিক তরজা, কাজ শুরুর দিন আন্দোলনকারীরা কোনও মন্তব্য না করলেও রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি—দুই দলই এই প্রকল্পের কৃতিত্ব নিতে এগিয়ে এসেছে। বিজেপির দাবি, মোদী সরকারের উদ্যোগেই প্রকল্পের গতি ফিরেছে, অন্যদিকে শাসক তৃণমূলের বক্তব্য, এই প্রকল্পের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তিনিই মানুষের পাশে ছিলেন।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া,স্থানীয় মানুষজনের আশা, এবার আর জট সৃষ্টি হবে না এবং দ্রুত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তাঁদের মতে, রেল যোগাযোগ চালু হলে এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলবে।

অপরদিকে আন্দোলনকারী এক মহিলা বলেন – “আমাদের একটাই দাবি ছিল, দিঘি বাঁচাতে হবে। আদালতের রায় প্রকাশ হওয়ার পরই কাজ শুরু হয়েছে, এখন আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।”
যদিও তারকেশ্বর–বিষ্ণুপুর রেল প্রকল্প সেকশন ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রজিৎ হাজারি বলেন,“আদালতের নির্দেশ মেনে কাজ শুরু হয়েছে। নিরাপত্তার মধ্যে দ্রুত এই প্রকল্প শেষ করার চেষ্টা চলছে।
তবে রেলের কাজ শুরু হওয়ার পরে
গোঘাট ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিজয় রায়, “এই রেল চালু হলে বহু বছরের স্বপ্ন পূরণ হবে। মানুষের যাতায়াত ও ব্যবসায়িক উন্নয়নে বড় পরিবর্তন আসবে।
অপরদিকে গোঘাটের বিজেপি নেত্রী
দোলন দাস বলেন, এই প্রকল্পের অগ্রগতি মোদীজির উদ্যোগেই সম্ভব হয়েছে। বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটছে।

Loading

Leave a Reply