নিজস্ব প্রতিবেদন :গোঘাট,
প্রীতম পাল
দুর্গাপুজো আসতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। পুজো মানেই আলো, রঙ, গান, আনন্দ আর মেলা। সেই মেলায় কিংবা গ্রামের হাটে, বাজারের কোণে আবারও দেখা মিলছে ছোট্ট অথচ রঙিন এক খেলনার—ফতিঙ্গা। বাঁশের কাঠি, স্টিলের তার আর রঙিন কাগজে তৈরি এই খেলনাটা শুধু ঘুরে বেড়ানো এক টুকরো কাগজ নয়, বরং শৈশবের দরজা খোলার এক অমূল্য চাবি।
ফতিঙ্গা হাতে নিতেই যেন ফিরে যাওয়া যায় সেই দিনগুলোতে, যখন হাওয়ায় ঘূর্ণি খেতে খেতে দৌড়ে চলা ছিল এক অনাবিল আনন্দ। গ্রামীণ বাংলার প্রায় প্রতিটি মানুষের শৈশবেই এই খেলনাটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অসংখ্য স্মৃতি।আজও কামারপুকুরের রাস্তায় দেখা যায় দাদুর সাইকেলের সামনে বসে থাকা ছোট্ট নাতনির হাসি, যার হাতে ঘূর্ণায়মান রঙিন ফতিঙ্গা। গ্রামের বাতাসে বাজতে থাকা বাঁশি, পাশে দোকানে সাজানো মাটির খেলনা, আর সেই ফতিঙ্গার ঘূর্ণন যেন মেলায় এক আলাদা ছন্দ এনে দেয়।
এই খেলনার পেছনে রয়েছে অনেক পরিবারের জীবিকা। কামারপুকুরের বাসিন্দা সত্যজিৎ রায় প্রতিদিন তৈরি করেন এই ফতিঙ্গা। উৎসবের মৌসুমে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি সাইকেলে করে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ান। প্রতিটি ফতিঙ্গার দাম মাত্র কুড়ি টাকা। কারও কাছে এটা শুধুই শিশুর খেলনা, আবার কারও কাছে এটা নিজের হারানো শৈশব ফিরে পাওয়ার এক মধুর সুযোগ।
সত্যজিৎ বাবু বলেন, “অনেকে বাচ্চাদের জন্য কেনেন, কিন্তু কিনতে গিয়ে নিজেরাও ছোটবেলার কথা মনে করেন। তখন তাঁদের চোখে ভিন্ন আলো ফুটে ওঠে। এই তো আমাদের কাজের আসল আনন্দ।”
ফতিঙ্গার এই রঙিন ঘূর্ণন তাই শুধু বাজারে বিক্রির সামগ্রী নয়, বরং উৎসবের আনন্দের এক অঙ্গ। উৎসব মানে শুধু পূজো নয়—উৎসব মানে সেই ছোট ছোট সুখগুলোকে ধরে রাখা, যেগুলো আমাদের জীবনকে রঙিন করে তোলে।
![]()


