দিল্লি টেস্টে ফের ক্যারিবীয় আত্মসমর্পণ। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও ভারতীয়দের দাপটে হার স্বীকার করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। প্রথম টেস্টে আড়াই দিনে জয় পেয়েছিল ভারত, আর দ্বিতীয় টেস্টে সময় লাগল চার দিন এবং পঞ্চম দিনের মাত্র এক ঘণ্টা। কোনওভাবে ইনিংস হার এড়াতে পারলেও ম্যাচে রক্ষা হল না ক্যারিবীয়দের। ফলে সাত উইকেটে জিতে দুই শূন্য ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করল ভারত। টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে এটাই শুভমন গিলের প্রথম সিরিজ জয়।
পঞ্চম দিনের সকালে ভারতের জেতার জন্য দরকার ছিল মাত্র আটান্ন রান, হাতে ছিল নয় উইকেট। তাই ফলাফল নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। যশস্বী জয়সওয়াল দ্রুত আউট হলেও লোকেশ রাহুলের শান্ত ইনিংসেই নিশ্চিত হয় ভারতের জয়। পঞ্চাশের বেশি রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। সাই সুদর্শন আউট হওয়ার পর কিছুক্ষণ ব্যাট করেন অধিনায়ক শুভমন গিল, তবে তেরো রানে সাজঘরে ফেরেন। কিন্তু ভারতের জয় তাতে কোনও ভাবেই থামেনি।
দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলায় প্রথম ইনিংসে ভারত ব্যাট করতে নেমে পাঁচ উইকেটে পাঁচশ আঠারো রানে ইনিংস ঘোষণা করে। ব্যাট হাতে দাপট দেখান যশস্বী জয়সওয়াল, যিনি করেন একশো পচাত্তর রান। অধিনায়ক শুভমন গিল অপরাজিত থাকেন একশো ঊনত্রিশ রানে। সাই সুদর্শনও খেলেন সাতাশি রানের ঝলমলে ইনিংস। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় দুইশো আটচল্লিশ রানে। ভারতের হয়ে কুলদীপ যাদব নেন পাঁচ উইকেট এবং রবীন্দ্র জাডেজা নেন তিন উইকেট। ফলো অন করানো হয় ক্যারিবীয় দলকে, তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তারা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনার জন ক্যাম্পবেল ও শাই হোপ ভারতের বোলারদের বেশ বেগ দেন। দুই জন মিলে তৃতীয় উইকেটে গড়েন একশো সাতাত্তর রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। জাডেজার বলে ক্যাচ ফেলেন ধ্রুব জুরেল, তবে পরের বলেই রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে একশো পনেরো রানে আউট হন ক্যাম্পবেল। এটি ভারতের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনারের শতরান, যা ২০০২ সালের পর প্রথম। এরপর শাই হোপও ধীরে ধীরে তিন অঙ্কে পৌঁছে যান। আট বছর পর টেস্টে শতরান করেন তিনি। ৫১ বছর পর ভারতের মাটিতে এক ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটার শতরান করলেন।
তবে ভাগ্য তখন ভারতের দিকেই। শতরানের পর মহম্মদ সিরাজের এক বল নিচু হয়ে আসে এবং ব্যাটে লেগে স্টাম্পে চলে যায়। ১০৩ রানে আউট হন হোপ। এরপর কুলদীপ যাদব ফের আক্রমণে ফিরে টানা তিনটি উইকেট তুলে নেন। অধিনায়ক রস্টন চেজ ফেরেন চল্লিশ রানে। শেষ দিকে জাস্টিন গ্রিভস ও জেইডেন সিলস কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তাঁদের জুটিতে যোগ হয় উনআশি রান। গ্রিভস অর্ধশতরান করেন, সিলস আউট হন বত্রিশ রানে। ফলে ভারতের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় একশো একুশ রান।
শেষ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই যশস্বী জয়সওয়াল আউট হলেও বাকিটা সময় ভারত সহজেই কাটিয়ে নেয়। লোকেশ রাহুল ও সাই সুদর্শনের জুটি ইনিংস স্থির রাখে এবং চতুর্থ দিনের শেষে ভারতের জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। পঞ্চম দিনের সকালে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই অবশিষ্ট আটান্ন রান তুলে নেয় ভারত এবং সাত উইকেটে জয় নিশ্চিত করে।
এই জয়ের মাধ্যমে সিরিজে দুই শূন্য ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে শুভমন গিলের নেতৃত্বে ভারতীয় দল টেস্ট সিরিজে নিজেদের আধিপত্য আরও একবার প্রমাণ করল। টেস্ট অধিনায়ক হিসাবে প্রথমবার সিরিজ জিতে উচ্ছ্বসিত শুভমন গিল বলেন, দল হিসেবে আমরা পরিকল্পনা মেনে খেলেছি। বোলাররা দুর্দান্ত করেছে, ব্যাটাররাও দায়িত্ব নিয়েছে। এই জয় পুরো দলের প্রাপ্য।
দিল্লি টেস্টে ব্যাটে ও বলে ভারতের শ্রেষ্ঠত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠল। সামান্য প্রতিরোধ সত্ত্বেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনও রক্ষা হল না। শুভমন গিলের অধিনায়কত্বে শুরু হল ভারতের টেস্ট জয়ের নতুন অধ্যায়।
![]()


