কিছুদিন আগে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ফি বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলনের জেরে মাথায় আঘাত পান জেএনইউ সভানেতৃ ঐশী ঘোষ। ছাত্র সংসদের এই সভানেতৃর মাথায় 15 টি সেলাই পড়ে।বর্তমানে তিনি রাজ্যে এসেছেন। রাজ্যে এসেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একাধিক বিষয়ে মুখ খুলেছেন। এরপরই তার নাম না করে কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তিনি বলেন ‘মাথায় একটা বাড়ি পড়েছে, তাতেই এত কথা, এত রাজনীতি!’’
নিজের শহর দুর্গাপুরে দু’দিন আগে মিছিল করার অনুমতি পাননি ঐশী ও তাঁর সতীর্থেরা। তাঁর সভা ছিল বলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের দুই ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপরে বিতর্কে অংশগ্রহণ করে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী ঐশীকে বাধা দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘আরএসএসের দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করেছে। তার পরেও লড়াইয়ের ময়দানে এসে দাঁড়িয়েছে মেয়েটি। বাংলার গর্ব ও!’’ জবাবি ভাষনে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে কে এসেছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন সভা করতে পারেনি, তা-ই নিয়ে এত কথা! যখন বলেন, আপনারা সব ভুলে যান! মনে আছে, হাজরা মোড়ে সিপিএম মেরে আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। আমি ৩৪ বছরে অনেক কিছু দেখে নিয়েছি।’’ বাংলায় এখন যে কোনও দল যেমন খুশি সভা-মিছিল করতে পারে এবং অন্য রাজের তুলনায় এখানে গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত বলেও দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী।বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী যখন তাঁকে কটাক্ষ করছেন, ঐশী তখন হাওড়ার শিবপুরে এসএফআইয়ের মিছিলে ছিলেন। জেএনএউএসএউ-এর সভানেত্রী বলেন, ‘‘এখানকার রাজ্য সরকার বলছে, তাঁরা সিএএ-র বিরুদ্ধে। কিন্তু এ রাজ্যেই আবার যখন কোনও রাজনৈতিক দল এই আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের লড়াইটা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাইছে, তখন কোথাও কোথাও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বা বাধা দেওয়া হচ্ছে। সিএএ-র বিরুদ্ধে যে সব দল আন্দোলন করছে, তাদের কর্মসূচিকে আটকে দেওয়ার অর্থ বিজেপি বা আরএসএসকে সুযোগ করে দেওয়া!’’ পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সভা করতে গিয়েও বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে ঐশীর মন্তব্য, ‘‘যদি ৩৪ বছরে মত প্রকাশের স্বাধীনতাই না থাকত, তা হলে তৃণমূল ক্ষমতায় এল কী করে?’’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে পাল্টা মুখ খুলেছেন সুজনবাবুরাও। তাঁদের বক্তব্য, আরএসএস যাকে তাড়া করে মারছে, দিল্লি পুলিশ অপরাধীদের ধরছে না, সেখানে এ রাজ্যের সরকারের ভূমিকা বিজেপিরই সমতুল। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘নিজের মাথা ফাটার ঘটনার রাজনৈতিক ফায়দা মুখ্যমন্ত্রী তোলেননি? সরকার এফআইআর করেছিল, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল, তাঁর রাজনৈতিক সংস্রবও ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেই ঘটনার বিচারে সাক্ষ্য দিতে যাননি কেন? অভিযুক্তের পরিবারের এক জন তৃণমূল, এক জন এখন বিজেপি!’’ সব মিলিয়ে ঐশী ঘোষকে নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক পারদ এবার চরছে। অনেকে বলছেন দিল্লিতে বিজেপির ঐশীর ভুত দেখছেন। আর রাজ্যে এই ছোট মেয়েটি মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে মুখ্যমন্ত্রীর। তাই একজন ছাত্রীর মাথা ফাটানো নিয়েও এমন মন্তব্য করছেন মুখ্যমন্ত্রী।