জেলা

পরিযায়ী শ্রমিকদের সাথে অমানবিক আচরণ চুঁচুড়ায় !

ঘরে ফিরেও ঘরে ঢোকা আর হল না। নিজের বাড়ি, নিজের চেনা মানুষগুলো হয়ে গেল অচেনা। দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল তারা, সারাটা দিন কেটে গেল রাস্তায়। দুদুটো কোলের শিশু বুঝলোই না, কি অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছে তারা। নিজের বাড়ি থেকেই নিজেরাই রয়ে গেল অচ্ছুৎ। প্রশাসনের কর্তারা এসেও কোনওভাবেই তাদের বাড়িতে প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা করতে পারল না। ব্যবস্থাও করতে পারল না কোনও স্কুলে। অবশেষে গভীর রাতে ঠাঁই হল, নিজের পাড়া থেকে বহু দূরে একটি স্কুলে। পরে কোদালিয়া ২ নম্বর পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের কাছে, যে দুটি শিশু ও দুটি মহিলার, রাতটুকুর জন্য হলেও পাশে দাঁড়ান। তিনি এসে তারই এলাকার একটি স্কুলের তালা খুলে থাকার ব্যবস্থা করলেন। পরিযায়ীদের একটাই কথা, নিজের বাড়িতে এসে এইরকম ঘটবে জানলে কিছুতেই আসতাম না। দুটি শিশুর মুখের দিকে তাকিয়েও কারও মায়া হল না। সকল থেকে না খেয়ে দিয়ে, সারাদিন ধরে ঘুরছি সকলকে কাছে, একটু সাহায্য চেয়ে। কেউ একমুঠো খাবারও এগিয়ে দেয়নি, পাশেও দাঁড়ালোনা কেউ। নিজে ভূমে পরবাস হয়ে গেল আমাদের।

গোপাল বিশ্বাস তার মা,স্ত্রী ও দুটি সন্তানকে নিয়ে শনিবার গুজরাট থেকে ফিরেছিল হাওড়াতে। সেখান থেকেই তাদের বাসে করে শ্রীরামপুর নিয়ে আসা হয়। সেখান তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর সার্টিফিকেট দিয়ে পাঠানো হয়, চুঁচুড়ার ভগবতীডাঙ্গার বাড়িতে। এরপরই শুরু হয় চরম অমানবিকতা। নিজেদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে দেওয়া হয়। পাড়ার লোক রুখে দাঁড়ায়। পাড়ায় ঢোকা যাবে না বলে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বহু চেষ্টা করেও তাদের বোঝাতে পারেন নি। এরপর তাঁরা যান চুঁচুড়া থানায়। থানা থেকেও বহু চেষ্টা করা হয়। আদতে কিছুই উপকার হয়নি। রাত ১২টা পর্যন্ত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে ওই পরিবার দুটি শিশুকে কোলে নিয়ে। প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিককে পঞ্চায়েত এলাকার রবীন্দ্রনগরের একটি স্কুলের তালা খুলে দিয়ে থাকার ব্যাবস্থা করেন পঞ্চায়েত প্রধান। যদিও তাঁদেরকে থাকতে দেওয়ার অপরাধে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে চড়াও হয় এলদল যুবক। ব্যাপক হেনস্থা করা হয় শিক্ষককে বলে অভিযোগ। এরপর কোদালিয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অজয় মোহান্তি চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রে ওই পরিবারের থাকার ব্যাবস্থা করেন। শিশু দুটির মুখ মনে পড়লেই একটা কথাই মনে পড়ছে, যে এরা কিছুই জানলো না, কিছুই বুঝলোনা… কি নিদারুণ এক ঘটনার শিকার হয়েছে তারা। বারবার একটা কথাই কানে বাজছে, “এ কোথায় এলাম আমরা !”

সরকারি প্রচার, রোগীর সাথে নয়- রোগের সাথে লড়াই করতে হবে…কথাগুলি যেন এইঘটনার পর অনেকটা হাস্যকর হয়ে গেল।

Leave a ReplyCancel reply