দেশ

পিঞ্চ হিটার বা সুপার সাব তকমা মুছতে হবে বাম-কংগ্রেস জোটকে, চাই অভিন্ন কর্মসূচি

অনেক সময় দেখা যায় কোনও ম্যাচে ছয় নম্বর পজিশনের ব্যাটসম্যানকে ফাটকা তিন নম্বরে খেলিয়ে প্রতিপক্ষের ঝুলি থেকে ম্যাচ বের করে নিয়েছে কোনও দল। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ওই ব্যাটসম্যানকে বলা হয় পিঞ্চ হিটার। আবার কোন টেস্ট ম্যাচের শেষ সেশনে উইকেট পড়ে যাওয়ার পর কোনও ব্যাটসম্যানকে আগলাতে কোনও বোলারকে ব্যাট করতে নামিয়ে দেওয়া হয়। যাকে বলে নাইট ওয়াচম্যান। ফুটবলেও তেমন আছে সুপার সাব। কিন্তু এভাবে ফাটকা খেলে কোনও কোনও ম্যাচ জেতা যায় ঠিকই, কিন্তু তাতে দলের ধারাবাহিকতা থাকে না। বর্তমানে বাংলার রাজনীতিতে বাম-কংগ্রেসের জোটের কর্মসূচি গত কয়েকবছরে স্টাডি করলে দেখা যাবে ওইরকম ফাটকা ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচের সঙ্গেই যেন সাম্যঞ্জস্য রেখে চলছে।

ক্রিকেট ম্যাচে পিঞ্চহিটার বা ফুটবলে সুপার সাব ব্যবহারের মতোই কোনও এক ভোটে ফাটকা উতরে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই যেন মনে হচ্ছে এই জোট। এভাবে কী মানুষের আস্থা অর্জন বা বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করা সম্ভব! কারণ ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিলিগুড়ি পুরভোটে বাম কংগ্রেস দল জুটি বেঁধে লড়াই করে সাফল্য পেয়েছিল। সেই শিলিগুড়ি মডেলকে সামনে রেখে ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে এই দুই দল গাঁটছড়া বেঁধে লড়াই করে। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায় শিলিগুড়ি মডেল গোটা রাজ্যজুড়ে কাজ করেনি। এরপরই জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন উঠে যায়। এরপর পঞ্চায়েত ভোটে জোট নিয়ে নানান দ্বন্দ্ব সামনে আসে। কয়েক মাস আগে হয়ে যাওয়া লোকসভা নির্বাচনে জোট নিয়ে বিভিন্ন টালবাহানার পর অবশেষে ভেস্তে যায়। এদিকে লোকসভা নির্বাচনের পর ফের জোটবদ্ধভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই জোটের ভবিষ্যৎ কী।

অতীত অভিজ্ঞতার দিকে তাকালে এই জোট নিয়ে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা কতটা তৈরি হবে তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন উঠে আসছে। দুই দলের গত কয়েক বছরের কর্মসূচি থেকে এই অভিযোগ আসতে পারে, যে বাম কংগ্রেসের জোট কি তাহলে সুবিধাবাদী জোট? এই প্রশ্ন কি এড়িয়ে যেতে পারবেন দুই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব? সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন, এন পি আর, এনআরসির বিরোধিতায় কলকাতায় বাম কংগ্রেসের জোটের দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম যৌথ মিছিলে চোখে পড়ার মতোই ভিড় হয়েছিল। যা দেখে আলিমুদ্দিনের পাকা মাথার নেতারা নতুন করে অক্সিজেন পাওয়ার মতোই আচরণ করেছেন। উৎফুল্ল হাত শিবিরও। যদিও এত বড় কর্মসূচি নেওয়ার পর ফলোআপ কর্মসূচি কই? তার উত্তর অবশ্য কোনও দলের নেতাদের কাছেই নেই। এতে কি মানুষের বিশ্বাস যোগ্যতা নতুন করে তৈরি হবে? সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে। দুই দলের নেতারা এই জোটের ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করলেও তা আদৌ টিকবে বা কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। একটা কর্মসূচিতে ভিড় দেখে উৎফুল্ল হওয়ার আদৌ কি কোনও কারণ আছে। কারণ গত কয়েক বছরে কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে দেখলে বামেদের সিঙ্গুর থেকে শালবনী হোক বা ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সভা, লাল পতাকার আস্ফালন কিন্তু দেখেছে রাজ্যের মানুষ। কিন্তু সেই সমর্থনকে ভোট বাক্স পর্যন্ত নিয়ে যেতে না পারা নেতাদের ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয় বলেই রাজনৈতিক মহলের মত। পুনরায় জোট করে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাম-কংগ্রেস উভয় দল। কিন্তু এই জোটের অস্তিত্ব প্রমাণে সবথেকে আগে প্রয়োজন অভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা। রাজ্যজুড়ে যদি অভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে না পারে তাহলে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা দিনদিন কিন্তু আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আগামী বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই চোরকে অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্তভাবে অভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। কারণ এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতির যা পরিস্থিতি তাতে লোকসভা ভোটে মানুষ রাজ্যের শাসকদলের থেকে অনেকাংশে মুখ ফেরালেও নাগরিকত্ব ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল তাদের পালের হাওয়া অনেকটাই জোরালো করে ফেলেছে। তাই এই হাওয়া কে সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে বইয়ে এনে পুনরায় মানুষকে লাল রঙের প্রতি আকৃষ্ট করাটা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং। তাই কেবল মিটিং-মিছিলে ভিড় দেখে উৎফুল্ল না হয়ে ওই ভিড়কে ভোট বাক্সে টেনে নিয়ে যাওয়াই এখন একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত বাম কংগ্রেসের এই নতুন জোটের। আর তা না করতে পারলে নতুন করে ফের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হবে বাম-কংগ্রেসকে।

1424 total views , 1 views today

Leave a Reply