জেলা

করোনা; বিরাম নেই হরিনামে, ৪২ বছর ধরে আজও ননস্টপ

“একবার বলো রে, মধুমাখা হরিনাম বলো রে” বাংলার ১৩৮৫ সাল ইংরেজি ১৯৭৮,বাংলাজুড়ে ভয়ঙ্কর বন্যা। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন। জলের টানে তলিয়ে গেছে বহু মানুষ। বিধ্বস্ত হয়েছে জনপদ, সাপ আর মানুষ একই জায়গায় অবস্থান করেছে। সেই সময় বন্যার ভয়ঙ্কর প্রকোপ থেকে এলাকার মানুষকে নিরাপদে রাখতে এলাকার মানুষ গোঘাটের বদনগঞ্জ এলাকার কয়াপাট গ্রামে তিনদিনের জন্য শুরু করেছিলেন হরিনাম সংকীর্তনের আসর। তারপর এলাকার মানুষের অনুরোধে তা বেড়ে হয় সাতদিন, তা থেকে এক মাস, তারপর সেই হরিনাম আর থেমে থাকে নি একটানা ৪২ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে নাম সংকীর্তন চলে আসছে আজও। সমস্ত বিশ্ব যখন করোনা আতঙ্কে গৃহবন্দি হয়ে আছে তখন এই এলাকার মানুষের করোনা থেকে রক্ষা পেতে মূল ভরসাস্থল এই সংকীর্তনের আসর। এলাকার মানুষ বলছেন এই ৪২ বছরে নানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়েছে, নানান ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কিন্তু কখনও কোনও বড় বিপদ এই গ্রামকে স্পর্শ করতে পারেনি।কুড়ি বছর আগে একবার এই সংকীর্তনের আসরে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের এমনই মহিমা যে কোথা থেকে এক ভক্ত এসে বললেন তিনি এক মাস আসর চালানোর খরচ দেবেন, তারপর আবারও এক ভক্ত, তা থেকে আরও এক ভক্ত, আসরে আজ থামেনি।



সেই দুর্যোগের দিনেও যখন আসর বন্ধ হয়নি তখন এলাকার মানুষের বিশ্বাস এই আসর অনন্তকাল ধরে চলবে। সৃষ্টি যতদিন থাকবে ততদিন এই আসর থাকবে। আর এই আসরই বাঁচিয়ে রাখবে এলাকার মানুষকে। সংকীর্তন আসরের একটি কমিটিও করেছে এলাকার মানুষ যার নাম দেওয়া হয়েছে অখন্ড নামযজ্ঞ পরিষদ। এই পরিষদের বর্ষীয়ান সদস্য শশাঙ্ক পাল বলছেন ১৯৭৮ থেকে পালা গানের আসর শুরু হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত একদিন এক মুহূর্তের জন্য তা বন্ধ হয়নি। এলাকার মানুষের অন্যতম ভরসাস্থল এই আসর। তারকনাথ হেঁস, পুরোহিত নেপাল মুখার্জী, গোপাল নন্দীরা প্রত্যেকেই বলছেন তাঁরা বিশ্বাস করেন এলাকার মানুষকে করোনার হাত থেকে এই আসর দূরে রাখবে। যদিও পরিষদের তরফ থেকে মন্দিরে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে, যে কজন পালা করে কীর্তন পরিবেশন করছেন তারা প্রত্যেকেই চার ফুট করে দূরত্ব বজায় রাখবেন। এই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলছে কৃষ্ণভজনা।




প্রধান পুরোহিত নেপাল মুখার্জি বলেন, বর্তমানে করোনার জন্য কিন্তু এই এলাকার মানুষ আতঙ্কিত নয়। তারা প্রত্যেকেই সরকারের সমস্ত বিধি-নিষেধ মেনে চলছেন। পাশাপাশি তারা বিশ্বকে করোনা মুক্ত করতে এই আসরে প্রতিদিন প্রার্থনা জানাচ্ছেন। বিজ্ঞান তাদের মতো করে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন। আর ৪২ বছরের বিশ্বাস, অটুট মনোবল দিয়ে করোনাকে জয় করতে চাইছে। প্রত্যেকেই একটি প্রার্থনা জানাচ্ছেন, ঝড় থেমে যাক, পৃথিবী আবার শান্ত হোক। প্রত্যেকের পথ আলাদা কিন্তু মূল লক্ষ্য একটাই, করোনা প্রতিরোধ। বন্যা প্রতিরোধে যে আসর শুরু হয়েছিল সেই আসর করোনা প্রতিরোধেও মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। এটাই বিশ্বাস এলাকার মানুষের।


Loading

Leave a Reply