দুই শিক্ষকের উদ্যোগে বলিউড সঙ্গীত জগতে পা দিল আদিবাসী কিশোরী চাঁদমনি হেমব্রম । ভাইরাল হওয়া নেহা কক্করের “ও হামসাফার “গান গাওয়া চাঁদমনি হেমব্রম এবার পা রাখল বলিউড সঙ্গীতের দুনিয়ায় । সৌজন্যে দুই শিক্ষক দূর্গাপুর নিবাসী চিরঞ্জিত ধীবর ও হুগলির শ্যাম হাঁসদা । শিক্ষক শ্যাম হাঁসদা সহ পুরো টিম সাহায্য করেছেন এই দুঃস্থ প্রতিভাবান আদিবাসী কিশোরীকে । গান তোলানো থেকে শুরু করে আর্থিক সাহায্য সমস্ত কিছুতে এই টিম কাজ করেছে।
এই টিমেরই এক সদস্য সাঁওতালি গায়ক মহেশ হাঁসদা চাঁদমনি কে যথেষ্ট তালিম দিচ্ছেন । অন্যদিকে দুর্গাপুরের জনপ্রিয় স্কুল শিক্ষক চিরঞ্জিত প্রথম থেকেই চাঁদমনিকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন । তাঁর জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ থেকে চাঁদমনির গান ভাইরাল করা হয় যা প্রায় ১০ লক্ষের উপর মানুষের কাছে পৌঁছায়। এই পোষ্ট দেখে বলিউড এর বিভিন্ন শিল্পীরা যোগাযোগ করেন চিরঞ্জিতবাবুর সাথে । জনৈক শিল্পী আয়শান আদ্রি প্রথম এগিয়ে আসেন চাঁদমনিকে বলিউডের দুনিয়ায় নিয়ে আসার জন্য । এই শিল্পীর মহানুভবতার জন্য প্রথম বলিউড গান “জুদাইয়া বে” রিলিজ হতে চলেছে চাঁদমনির । গানটির মিউজিক ডিরেক্ট ও মিউজিক কম্পোজ করেছেন পাঞ্জাবের খ্যাতনামা শিল্পী আয়শান আদ্রি(AYSHAN ADRI), লিরিক্স আরবান স্বরাজের । লকডাউন উঠলে পাঞ্জাবে এই গানের ভিডিও শুটিং হওয়ার কথা । শুক্রবার স্টুডিও তে চাঁদমনি এই গান রেকর্ড করে । যা আগামী দিনে তার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে । এমনকি টেলিভিশনের জনপ্রিয় শো ‘ইন্ডিয়ান আইডল’ সিজন ১২ থেকেও অফার আসে । সবকিছু ঠিকঠাক চললে শীঘ্রই টেলিভিশনের পর্দায় দেখতেও পাওয়া যাবে এই প্রতিভাবান আদিবাসী মেয়েটিকে ।
হুগলীর ইটাচুনা গ্রাম পঞ্চায়েত অন্তর্গত মুল্টি গ্রামের এক দিকে দশটি আদিবাসী পরিবারের বাস। তারমধ্যে একটি চাঁদমণিদের। তিন বোনের মধ্যে সে-ই বড়। স্থানীয় সারদেশ্বরী কন্যা বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্রী সে। দশ বছর আগে যক্ষ্মায় মারা গিয়েছেন চাঁদমণির বাবা চুনু হেমব্রম। তারপর থেকে পরিবারের হাল ধরেছেন মা মালতীদেবী। মায়ের সঙ্গে মাঠে চাষের সমস্ত কাজ করেছে পিতৃহারা চাঁদমণি। লকডাউনের মধ্যে কষ্ট আরও বেড়েছে। বর্তমানে একবেলা আত্মীয়ের বাড়িতে খাবার জোটে। ইদানিং আম্ফান ঝড়ে তাদের ঘর কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু শত কষ্টের মধ্যেও গান গাওয়ার ইচ্ছেটা মরেনি। কোনও তালিম নেওয়ার সুযোগ নেই। পাশের বাড়িতে এক দাদুর গান শুনে শুনেই চলে চর্চা। জীবনের চাকা ঘোরানোর কারিগর ওই দুই শিক্ষককে কুর্নিশ জানাচ্ছেন আপামর জনতা ।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল হুগলির এই আদিবাসী কিশোরীর গাওয়া কিছু গানের ভিডিয়ো। একটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে’। অন্যটি, সঙ্গীতশিল্পী নেহা কক্করের গাওয়া ‘ও হমসফর’ গানটি। এছাড়াও তার গলায় “থোরী জগা” , “কালো জলে কূচ্লা তলে” গানগুলিও যথেষ্ট প্রশংসা কুড়িয়েছে সোশাল । ভিডিয়ো যেমন ভাইরাল হয়েছে, তেমনই নেট-দুনিয়ার নাগরিকেরা প্রশংসায় ভরিয়েছেন মেয়েটিকে।
জানা গেছে, পান্ডুয়ার ইটাচুনা খন্যান গ্রাম পঞ্চায়েতের মুল্টি গ্রামে ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে প্রান্তিক পরিবারের ওই কিশোরীর গান রেকর্ড করেছিলেন শ্যাম হাঁসদা নামে এক আদিবাসী যুবক। পরে তিনি সেটা ফেসবুক, ইউটিউবে ছড়িয়ে দেন। সেই ভিডিও চিরঞ্জিতবাবু নিজের পেজে শেয়ার করার পর তা সারা ভারতবর্ষে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ।
বলিউড সঙ্গীতে পা দিয়ে চাঁদমনি খুব খুশি। সকলকেই ধন্যবাদ জানিয়ে জীবনের প্রথম বলিউড গান “জুদাইয়া বে ” কে সুপারহিট করবার জন্য জনগনের কাছে আগ্রহ করেছে।