জেলা

রাজ্যে প্রথম ভার্চুয়াল বিয়ে, পাত্র পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাটের, পাত্রী কুয়েতের

খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে বনের পাখি ছিল বনে, একদা কি করিয়া মিলন হল দোঁহে…কী ছিল বিধাতার মনে। দুটি মনের মিলনে গড়ে উঠল দুই দেশের মেলবন্ধন।
ভার্চুয়াল পুজো উদ্বোধনের পর এবার ভার্চুয়াল বিয়ে। সৌজন্যে করোনা মহামারী। পাত্র পূর্ব বর্ধমানের দাঁইহাট নিবাসী। পাত্রীর বাড়ি,.. সুদূর কুয়েতে। শুক্রবার ইসলাম ধর্ম মতে কবুল হল নিকা। নেপথ্যে যেন বেজে উঠল অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘খুদা গাওয়া’ ছবির সেই বিখ্যাত গান, ‘তু মুঝে কবুল। ম্যয় তুঝে কবুল। ইসি বাতকা। গাওয়া খুদা। খুদা গাওয়া।’ বাদ যায়নি বিয়ের কোনও নিয়ম নীতি, ফোটোশ্যুট, পাত পেড়ে খাওয়া সবই চলল। আত্মীয়-স্বজন থেকে আমন্ত্রিত ছাড়াও বাংলার প্রথম ভার্চুয়াল বিয়ের সাক্ষী রইলেন দাঁইহাটবাসী।

পাত্রের মীর আবু তালেব আলি ও পাত্রী সাহরাম ফতেমার সম্পর্কের পরিণতি যেমন অভিনবভাবে হল, তেমনই তাদের প্রেম কাহিনী রূপকথার গল্পের থেকে কোনও অংশে কম নয়। আবু তালেব দাঁইহাটের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাজিপাড়ার বাসিন্দা মীর আদম আলির ছেলে আবু তালেব দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৭ সালে ভেলোরে দু’টি কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। তারপর মাঝেমধ্যেই ভেলোরে চিকিৎসা করাতে যেতে হয়। ২০১৮ সালে কুয়েতের বাসিন্দা পেশায় গাড়ি ব্যবসায়ী মহন্মদ আয়ূব তাঁর কিডনি সমস্যার জন্য বড় মেয়ে ও ছোটো মেয়ে ফতেমাকে নিয়ে ভেলোরে আসেন। সেখানে ফতেমার সঙ্গে প্রথম দেখা তালেবের। ঠিক যেন লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট। বাড়ি ফিরে এলে বন্ধ হয় যোগাযোগ। কিন্তু তালেবের মন পড়ে থাকে কুয়েতে। এরপর ফেসবুকে একদিন ইঠাৎ তালেব খুঁজে পান ফতেমার অ্যাকাউন্ট। তারপর হাই হ্যালো থেকে ছুটতে থাকে ভার্চুয়াল প্রেমের গাড়ি। করোনা পরিস্থিতি শুরুর আগে কুয়েত থেকে ফতেমা দিদির চিকিৎসার জন্য পরিবার নিয়ে বাংলাদেশের ঢাকায় আসেন। তারপরই লকডাউনে বন্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক উড়ান। তাঁরা আটকে পড়েন বাংলাদেশে। এদিকে প্রেমের স্টেশন ছেড়ে বিয়ের প্ল্যাটফর্মে থিতু হওয়ার ভাবনা ছিল আগেই। কিন্তু পরিস্থিতি পুরোটাই প্রতিকূল। এরপরই তাদের মিলনের অনুঘটক রূপে কাটোয়া শহরের ফটোগ্রাফার ইন্দ্রনীল নাথ ভার্চুয়াল বিয়ের ব্যবস্থা করেন।

এদিন পাত্রের বাড়িতেই বসেছিল বিয়ের আসর। নবাব বেশে পাত্র ক্যামেরার সামনে নানা পোজে ধরা দেয়। তারপর সুন্দর সোফায় ল্যাপটপ খুলে বসেন। ওপারে তখন বাংলাদেশে ল্যাপটপ খুলে তৈরি পাত্রী। নির্দিষ্ট সময়ে বাংলাদেশের কাজি পড়ালেন নিকা। বিয়ের পর পাত্র বলেন, আমরা দু’জন দু’জনকে প্রায় তিনবছর ধরে ভালোবাসি। কিন্তু করোনা আবহে সবকিছু গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। তারপর দুই পরিবার মিলে সিদ্ধান্ত হয় ভার্চুয়াল বিয়ের। আমি খুশি। বাংলাদেশ থেকে পাত্রী সাহরাম ফতেমা বললেন, শেষমেশ বিয়েটা হল, এতেই আমরা খুশি। তবে আপাতত তালেবের রাজকন্যা রয়েছে সাত সাগরার তেরো নদীর পাড়েই…করোনা বিদায়ের পরই অপেক্ষা শুধু ময়ূরপঙ্খী ভিড়িয়ে দেওয়ার।
আজ বাংলার পক্ষ থেকে নবদম্পতিকে থুড়ি ভার্চুয়াল নবদম্পতিকে অনেক শুভেচ্ছা।….

Loading

Leave a Reply