জ ৪ জুন, আরামবাগ রেল চলাচলের ১৩তম বর্ষপূর্তি। ২০১২ সালের এই দিনে বহু প্রত্যাশিত ট্রেন প্রথমবারের মতো প্রবেশ করেছিল আরামবাগ স্টেশনে। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতেছিলেন হাজারো মানুষ। এক যুগ পরে সেই আনন্দে এখন রয়েছে শুধু হতাশার ছায়া। কারণ, আরামবাগ থেকে গোঘাট পর্যন্ত ট্রেন চললেও, তার পরের অংশ — ভাবাদিঘি ও বিষ্ণুপুর- গোকুলনগর পর্যন্ত রেল সম্প্রসারণ আজও অধরা।
ভাবাদিঘিতে ‘অগ্রগতি’ নয়, চলছে শুধু আলোচনা
রেল কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, ভাবাদিঘি অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনি ও প্রশাসনিক সমস্যা চলছে। কিছু অংশের মানুষ জমি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আবার কোথাও কোথাও মাপজোক নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে রেল প্রকল্প কাগজে থাকলেও বাস্তবে তা আজও থমকে রয়েছে। আলোচনা এগোলেও আইনি জটে আটকে যাচ্ছে বার বার। জনপ্রতিনিধিরাও চুপ ভোট হারানোর ভয়ে।
হতাশ গোঘাটের মানুষ
সদানন্দ রায়, গোঘাটের এক কৃষক বলেন,
“প্রথমে শুনেছিলাম, ২০১৫ সালেই রেললাইন চলে আসবে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত। কিন্তু এখন ২০২৫ চলছে। মাঠে কিছুই নেই। শুধু লোকজন আসে, মাপজোক করে চলে যায়। আমরা বুঝে গেছি, আমাদের কথা কেউ শোনে না।”
বিপাশা দে, একজন কলেজ পড়ুয়া বলেন,
“ভাবাদিঘি হয়ে বিষ্ণুপুর পর্যন্ত ট্রেন চললে আমাদের কলেজে যাওয়া অনেক সহজ হতো। রোজ বাসে ভিড় আর সময় নষ্ট হয়। আরামবাগে ট্রেন এলেও আমরা তার সুবিধা পাচ্ছি না।”
রেলের পক্ষ থেকে বক্তব্য
রেলের একজন মুখপাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“জমি সমস্যা মেটাতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে সমাধান এখনও পুরোপুরি হয়নি। রাজ্য সরকার সহযোগিতা করলে কাজ দ্রুত এগোতে পারে।”
পিছিয়ে পড়া উন্নয়নের গতিতে
এই রেলপথ চালু হলে শুধু যাতায়াতই নয়, কৃষিপণ্য পরিবহণ, স্থানীয় হাটবাজার, পর্যটন এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও বিরাট উন্নতি সম্ভব। কিন্তু সেই সম্ভাবনার দরজা আজও বন্ধ। স্থানীয় মানুষদের মতে, এভাবে পরিকল্পনা থেমে থাকলে আমরা সময়ের থেকে এক যুগ পিছিয়ে পড়ব।
রেল চলাচলের ১৩ বছর পূর্তিতে মানুষ যে প্রশ্ন তুলছে তা স্পষ্ট – “কবে আসবে ভাবাদিঘির ওপর দিয়ে স্বপ্নের সেই রেললাইন?” এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এখন রেল ও সরকারেরই দায়িত্ব। না হলে আগামী বছরগুলিতেও বর্ষপূর্তি মানে হয়ে থাকবে শুধু এক খণ্ড স্মৃতি আর দীর্ঘশ্বাস।
![]()

