লকডাউনের মধ্যে কালনায় অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে হিন্দু প্রৌঢ়ের। এদিকে এই পরিস্থিতিতে মৃত্যুর পর দেহ সৎকারে এগিয়ে আসেননি প্রতিবেশীরা। এমনকী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন মৃতের নিকট আত্মীয়রাও। এই অবস্থায় মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে গিয়ে দাহ করলেন পাশের গ্রামের মুসলিম যুবকরা। এমন সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত দেখা গেল কালনার বৈদ্যপুর রাসতলা এলাকায়।
ওই এলাকার বাসিন্দা শান্তিময় মুখোপাধ্যায়(৫৫) কিছু দিন ধরে অসুখে ভুগছিলেন বলে পরিবারের দাবি। সোমবার বিকেলে বাড়ির দোতলার ঘরে তাঁকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন পরিবারের লোকজন। মৃত্যুর পর মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যেতে কেউ এগিয়ে আসেননি। মুখ ফিরিয়ে নেন প্রতিবেশীরাও। এই অবস্থায় ঘটনার খবর পৌঁছয় কালনা-২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব রায়ের কাছে। তিনি বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূল নেতা মিজানুর রহমান শেখকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেন। মুজানুর সাহেব কয়েকজন মুসলিম যুবককে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা দেখেন পরিবারের নিকট আত্মীয়রা কেউ মৃতদেহের কাছে যেতে রাজি নন। এমনকী প্রৌঢ়ের ডেথ সার্টিফিকেটও জোগাড় হয়নি। প্রতিবেশীরাও এগিয়ে আসছেন না। এরপরই খবর দেওয়া হয় এলাকার এক চিকিৎসককে। তিনি এসে মৃতদেহ দেখে ডেথ সার্টিফিকেট দেন। গ্রামের মানুষ বাড়ি কিছুটা দূরে জমায়েত হলেও কেউ মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যেতে এগিয়ে আসেননি। এরপরই ওই মুসলিম যুবকরা সিদ্ধান্ত নেন তাঁরাই সব ব্যবস্থা করবেন। এরপরই পাশের গ্রামের বাসিন্দা মকবুল, ফারুক, সাইফুল, ইলিয়াসরা এসে দোতালা থেকে মৃতদেহ নামিয়ে একটি ছোট ট্রাকে করে হাসপাতালে যাওয়ার উদ্যোগ নেন। তবে, দূরত্ব বজায় রেখে সঙ্গ দেন মৃতের ভাই চিন্ময় মুখোপাধ্যায়। সন্ধ্যায় কালনা বৈদ্যুতিক শ্মশানে মৃতদেহ পৌঁছয়। চুল্লির ঘরে পৌঁছে দিয়ে সৎকার শেষ হওয়ার পর রাতে বাড়ি ফেরেন মুসলিম যুবকরা।
প্রধান মিজানুর সাহেব বলেন, প্রণবদা আমাদের বিষয়টি দেখতে বলেন। তাঁর নির্দেশে আমরা গিয়ে দেখি মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার মতো কেউ নেই। আমি আমার গ্রামের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মৃতদেহ ছোট ট্রাকে করে শ্মশানে নিয়ে যাই। রাত পর্যন্ত শ্মশানে থেকে দাহ শেষ হওয়ার পরেই আমরা বাড়ি আসি।