এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ধূমপানে ছেড়ে দেবার জন্য অনুরোধ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি ধূমপান ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেক এবং ধূমপায়ীদের মধ্যে করোনার আক্রমণ তুলনায় অনেক বেশি। ধূমপায়ীদের আশেপাশে যারা থাকেন, তাদেরও প্রায় একই ধরনের বিপদ। আর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হলে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীর অবস্থা অত্যন্ত জটিল হতে পারে। তাই এই পরিস্থিতিতে ধূমপান ছাড়তে অনুরোধ করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।একই আবেদন জানিয়েছেন ‘ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল’। ধূমপায়ীদের জন্য করোনা সংক্রমণ কতটা বেড়েছে, সম্প্রতি তা উঠে এসেছে বিশ্বব্যাপী কয়েকটি সমীক্ষা ও গবেষণায়। এরপর থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়তে অনুরোধ করেছে।
এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রথমত, সিগারেট ছাড়তেই হবে। একবারে না পারলে আস্তে আস্তে খুব দ্রুত বের হয়ে আসুন। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা না পারছেন, ততক্ষণ সিগারেট, সিগারেটের প্যাকেট, দেশলাই বা লাইটার আদান-প্রদান করবেন না। অর্ধেক খেয়ে অর্ধেক আর একজনকে দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই নেই। আর ভাগাভাগি করে খাওয়া চলবে না হুঁকোও।
সম্প্রতি চীন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে এক হাজার ৯৯ জনকে নিয়ে একটি সমীক্ষা করে। ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত সমীক্ষার সেই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, অধূমপায়ীদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ সংখ্যক ধূমপায়ী জটিল অবস্থায় ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। তাদের কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে হয়েছে। এরপরও তাদের বেশিরভাগই মারা গিয়েছেন। এছাড়া অপর একটি গবেষণায় ৭৮ জন জটিল কোভিড রোগীদের নিয়ে সমীক্ষা করে দেখা গেছে এদের অধিকাংশই ধূমপায়ী। চীনের বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সবথেকে ভয়াবহ অবস্থা ইতালিতে। দেশটির স্বাস্থ্য গবেষণা এজেন্সি জানিয়েছে, কোভিড ১৯-এ মৃতদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই পুরুষ এবং তাদের অধিকাংশই ধূমপায়ী। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হলে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীর অবস্থা অত্যন্ত জটিল হতে পারে।
এদিকে বিপদ নিয়ন্ত্রণে রাখতে টোব্যাকো কন্ট্রোলের পক্ষ থেকে নিজেদের সব অফিস ও বহুতল বাড়ির মালিকদের কাছে ধূমপান কক্ষ বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ পাঠিয়েছে জাপান। দেশটির ‘টোকিও মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ ও ‘জাপান সোসাইটি ফর টোব্যাকো কন্ট্রোল’ উদ্যোগে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মতে, এসব জায়গা থেকেই একযোগে বেশ কিছু মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, যাকে বলে ‘ক্লাস্টার ইনফেকশন’।সংস্থা দু’টি জানায়, ক্লাস্টার ইনফেকশনের প্রধান কারণ যিনি ধূমপান করছেন, তার শরীরে যদি ভাইরাস থাকে, তবে তিনি যখন ধোয়া ছাড়বেন, সেই ধোয়ায় ভর করে ভাইরাসও ছড়িয়ে পড়বে আশপাশে। এমন অবস্থায় অ্যারোসল বা বাতাসবাহিত লালার কণায় ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত। তাই বদ্ধ ঘরে কাছাকাছি বসে ধূমপান করলে অন্যের মধ্যেও ছড়াবে ভাইরাস।
বিশ্বের বিভিন্ন বক্ষরোগ বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস যেসব রিসেপ্টারের মাধ্যমে কোষের মধ্যে ঢোকে, ধূমপান করলে সেসব রিসেপ্টার অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। ফলে ভাইরাস খুব দ্রুত গতিতে বংশবিস্তার করে বিপাকে ফেলে দিতে বাহককে। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, ধূমপানের কারণে যদি ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ’ বা ‘সিওপিডি’ নামের রোগ হয়ে থাকে, তবে এক বার কোভিড হলে তার প্রকোপ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ধূমপানে কোভিডের আশঙ্কা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো ‘হ্যান্ড হাইজিন’ বজায় রাখতে না পারা। ধূমপান করার সময়ও মানুষ কিন্তু অসংখ্য বার নাকে-মুখে হাত দেন, একটু আগেই হয়তো সেই হাতে সিগারেটের প্যাকেট খুলেছেন, দেশলাই জ্বালিয়েছেন, যা হয়তো খানিক আগেই দোকানি বা অন্য কারও হাতে ছিল। কাজেই এদের কারও হাতে জীবাণু থাকলে তা আপনার হাতে-নাকে ও মুখে লেগেছে। আবার মাস্কের সামনের অংশটা ধরে মাস্ক খুলে সেই হাতে সিগারেট ধরিয়েছেন। সেখানে জীবাণু থাকলে সেটিও আপনার হাতে লেগেছে। তাই করোনার প্রকোপ থেকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধূমপান ছাড়া একটি অন্যতম বিষয়।