জেলা

বাবার ইচ্ছাপূরণ করার লক্ষ্যই এভারেস্ট জয়ী পিয়ালীর মূল রসদ

পারিবারিক পাহার ভ্রমনই পাহার প্রেমের কারন হয়ে ওঠে এভারেস্ট জয়ী কন্যার। ছোট বেলায় বাবা-মায়ের হাত ধরেই নেপাল সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন পাহার দর্শন চন্দননগর কাঁটাপুকুরের বাসিন্দা পিয়ালী বসাকের। বাবা তপন বসাকের ছিল পারিবারিক কেমিক্যাল ব্যাবসা। মা স্বপ্নাদেবী প্রথম থেকেই গৃহবধু। বসাক দম্পতির দুই মেয়ে পিয়ালী ও তমালি। বছর একত্রিশের পিয়ালী বড়। পাহার ভ্রমনের সময় তপনবাবুই বড় মেয়েকে আরও এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন। গিরিখাতে ভরা বিপদজনক পাহারে না ওঠাই ভালো। তাই বুকটা ধুকপুক করতো স্বপ্নাদেবীর। কিন্তু তপনবাবু হয়তো জানতো পিয়ালী আর পাঁচ জনের মত নয়। তাই মেয়েকে চন্দননগরের একটি আরোহন ক্লাবে ভর্তি করে দেওয়া।আর পিছু ফিরে তাঁকাতে হয়নি পিয়ালীকে। প্রশিক্ষন নেওয়ার পর একের পর পাহার জয় করেছে পিয়ালী। কিন্তু বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাস। পারিবারিক ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই দুশ্চিতা শুরু হয় তপনবাবুর। একের পর এক রোগ গ্রাস করতে শুরু করে তাঁকে। বসাক পরিবারে ক্রমশই আর্থিক অনটন নেমে আসে। সবথেকে বড় ধাক্কা বছর দশেক আগে। বিধাতার নিষ্ঠুর পরিহাসে সদা হাস্য তপনবাবুই সকলের কাছে পরিহাস হয়ে ওঠে। মানসিক রোগে আক্রান্ত হন তিনি। কিন্তু এতকিছুর পরও পিয়ালীর জেদ, অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে ছুঁতে পারেনি কেউ। হয়তো জীবনে বাবার ইচ্ছাপূরণ করার লক্ষ্যই পিয়ালীর মূল রসদ। তাই তো ২২শে মে ২০২২ রবিবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় আমাদের গ্রহের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়াই পা রাখলেন পিয়ালী। ৮৮৪৮মিটারে পিয়ালীর হাত ধরে উড়লো ভারতের জাতীয় পতাকা। মেয়ের জয়ে তখন বুক ফাটা আনন্দ মায়ের। তবে আনন্দের মধ্যেই আফসোস হায়রে ওর বাবা যদি বিষয়টা একটু বুঝতে পারতো! এদিনও একটি লুঙ্গি ও জামা গায়ে বাড়ির উঠোনে আপন মনে বসে ছিলেন পিয়ালীর বাবা তপনবাবু। বড় মেয়ে কোথায় গেছে জানেন? প্রশ্ন করতেই হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন তিনি। আবার প্রশ্ন কোথায়? সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ী কন্যার বাবার মুখেও তখন বিজয়ের হাসি হা-হা-হা। সত্যিই হয়তো সে সময়ে বড় মেয়ের এভারেস্ট জয়ের বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছিলেন তপনবাবু…..

Loading

Leave a Reply