জেলা

বিয়ে ঠিক হতেই প্রিয় পুতুলের গলা কেটে ফেলল নাবালিকা

খেলাধুলার বয়সে বিয়ে দিয়ে মা-বাবারা মেয়েদের শৈশব কেড়ে নেয়। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটল কলকাতার কাছেই দেগঙ্গা থানার উত্তর কাউকেপাড়ায়। বিয়ে বাড়ির উঠোনে পড়ে থাকতে দেখা গেল ধারালো বটি দিয়ে মাথা কাটা অবস্থায় একটি পুতুলের দেহ। নবম শ্রেণীর ছাত্রীর ১৫ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়ার দরুন সেই বালিকা হতাশাগ্রস্ত হয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথা কেটে ফেলেছে তার প্রিয় পুতুলের। এক নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করতে গিয়ে এমনই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়ে গেলেন পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা। কলকাতার দেগঙ্গার উত্তর কাউকেপাড়ায় একটি মাদ্রাসায় নবম শ্রেণীর ছাত্রী ১৫ বছরের একটি মেয়ের বিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। প্রশাসনের তরফ থেকে এবং চাইল্ডলাইনের পক্ষ থেকে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হওয়ার পর দেখা যায় ওই কিশোরী পুতুলের মাথা কেটে ফেলে দিয়েছে। প্রিয় পুতুলটির মাথা কেটে সে তার ক্ষোভ জানাতে চেয়েছিল।

সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন রকম প্রকল্প এবং প্রচারের সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যে বয়সে খেলাধুলা আর পড়াশোনা করার কথা সেই বয়সে খুন করা হচ্ছে মেয়েদের শৈশবকে। সে কারণেই তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকে নষ্ট করে নীরবে সেই ক্ষোভ প্রকাশ ঘটিয়েছে ওই নাবালিকা। জানা গেছে ওই মেয়েটির মা বধির এবং বাবা এক চোখে দেখতে পান না। কোনওমতে চেয়েচিন্তে সংসার চলে। পাড়া পড়শিরাই চেয়েচিন্তে সংসার চালানোর সাথে মেয়ের পড়াশোনা চালাচ্ছিল।

আর পাড়াপড়শিরাই চেয়েচিন্তে মেয়েটির বিবাহ স্থির করেছিল। বিয়ে বন্ধ করার কথা বলায় এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানান মেয়েটির পড়াশোনা চালানোর মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই তাদের পরিবারের। বাধ্য হয়েই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। আর মেয়েটি সেই অভিমানী প্রিয় পুতুলটির গলাকেটে উঠোনের পাশে ফেলে দিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে পরিবারের লোকজন বুঝতে পারে মেয়েটি কতটা বিধ্বস্ত। কিন্তু পরিবারের তাতেও কিছু করার ছিল না। অবশেষে চাইল্ড লাইন এর পক্ষ থেকে জানানো হয় মেয়েটি যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আঠারো বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত মেয়েটির বিয়ে দিতে পারবে না পরিবার। পুলিশের কাছে সেই রকমই মুচলেখা দেন বাবা-মা। তবে সমস্ত বিষয় নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। সরকারের কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রকল্প ছাড়াও সংখ্যালঘুদের পড়াশোনার জন্য এত সুযোগ-সুবিধা আর্থিক প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? তবে এ বিষয়ে প্রশাসক বলছেন কেবলমাত্র সরকারি সহায়তা এবং প্রশাসনের তৎপরতায় এই বাল্যবিবাহ বন্ধ হবে না। পরিবার-পরিজনদের সচেতন হতে হবে এ ব্যাপারে। তবেই হয়তো সমাজ থেকে বাল্যবিবাহ বর্জিত করা যাবে।

Loading

Leave a Reply