দেশ

জানালা দিয়ে উট দেখিয়ে তো আর বাচ্চার খিদে মেটে না, ফোনে আক্ষেপ রাজস্থানে আটকে পড়া বাঙালি বধূর

শিশুকে জানলা দিয়ে উট দেখিয়ে কী আর পেটের খিদে মেটানো যায়। ঘরে আর এক ফোঁটাও দুধ নেই। ফোনে আক্ষেপের সুরে জানালেন রাজস্থানের আটকে পড়া পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের বাঙালি পরিবারের এক গৃহবধূ। তবে জমানো টাকা প্রায় শেষের দিকে। ঘরে আর দু’দিনের খাবার মজুত রয়েছে। খাবারের অভাবে মরতে বসা রাস্তায় পথ কুকুরদের গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের গোলাপি শহর জয়পুরে বর্তমানে কার্যত শ্মশানে পরিণত হয়েছে।

লকডাউনের জেরে রাজস্থানের জয়পুরে গৃহবন্দি থাকা পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামের অনেক পরিবার এখন বেঁচে থাকার রসদ খুঁজছেন। জেলার প্রচুর মানুষ প্রতিবছর সোনার গয়না তৈরির কাজের জন্য রাজস্থানের জয়পুরে পাড়ি দেন। সেখানে কেউ সাত বছর কেউবা ১০ বছর ধরে জয়পুর শহরে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাড়িতে আছেন। লক ডাউনের জেরে তাঁরা এখন সেখানে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন। কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের শাঁখাই গ্রামে বেশ কয়েকটি পরিবার রাজস্থানের জয়পুর শহরের সুভাষচকে আটকে পড়েছেন। সেখান থেকেই ফোনে জানান তাঁদের দুরাবস্থার কথা।

শাঁখাই গ্রামের কায়স্থপাড়ার বাসিন্দা তন্ময় দে তাঁর স্ত্রী বুল্টি দে ও সাড়ে তিন বছরের ছেলে তুহিনকে নিয়ে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন। বুল্টি দেবী বলেন, আমরা দশ বছর ধরে এখানে রয়েছি। আমার স্বামী এখানে সোনার গয়না তৈরির কাজ করেন। ভাড়া বাড়িতে আমরা আছি। লকডাউনের পর খুবই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। ঘরে ছেলের জন্য আর এক ফোঁটা দুধ নেই। জানালা দিয়ে উট দেখিয়ে কী পেটে খিদের জ্বালা মেটানো যায়। জমানো টাকা প্রায় শেষের দিকে। কারখানা থেকে বেতন দেয়নি। একবেলা ভাত আর আলু সেদ্ধ করে খাচ্ছি। বাইরে আমাদের বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা এখানে অনেক বাঙালি পরিবার ভাড়া বাড়িতে আছি। কেউ আমাদের সাহায্যে করছে না।

শুধু জয়পুরের স্থায়ী বাসিন্দাদের সরকার থেকে রেশন দিচ্ছে। রাস্তার কুকুরদের গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কারন ওরা পথ কুকুরদের অন্য জায়গায় খাওয়াবে। কেতুগ্রামের বাসিন্দা তন্ময় দে বলেন, ঘরে আর দু’দিনের খাবার মজুত রয়েছে। বাড়ির সামনে আর ভ্রাম্যমাণ সব্জির গাড়ির দেখা মিলছে না। কীভাবে যে এখন একমুঠো খেয়ে বেঁচে থাকব বুঝতে পারছি না। এখন ঈশ্বরই ভরসা। ছেলে পরিবার নিয়ে কিভাবে বাঁচব আমরা। গোলাপি শহরে যেন এখন শ্মশানের নীরবতা। রাস্তায় শুধু পুলিস আর সংবাদমাধ্যমের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। দু’দিন আগে আমাদের সুভাষচকে কয়েকজন বাসিন্দাকে করোনা সন্দেহে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে। তারপর থেকে বাড়িওয়ালা আর বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছেন না।

Loading

Leave a Reply