দেশ

বিহারে নাবালিকা মেয়ের শেষকৃত্যে যেতে পারলেন না লকডাউনে বাংলায় আটকে পড়া মা

অনবরত চোখের জল ফেলতে ফেলতে একটাই কথা বলে চলেছেন মা, ‘বেঙ্গল মে কাভি নেহি আয়েগা’। তার কারণ অবশ্য বড়ই বেদনাদায়ক। কাটোয়ায় শ্রমিকের কাজে এসে লকডাউনে আটকে পড়েছেন মা। এই পরিস্থিতিতে বিহারে গ্রামের বাড়িতে নাবালিকা মেয়ের মৃত্যুতে শেষকৃত্যে যোগ দিতে পারলেন না ওই পরিযায়ী শ্রমিক। হোয়াটস অ্যাপে ভিডিও কলের মাধ্যমে মেয়ের অন্তিম যাত্রায় চোখের জলে বিদায় দিলেন গর্ভধারিনী।
মঙ্গলবার সকালেই গ্রামে অনিতা দেবীর বড় মেয়ে আর্তিকুমারি(১৫) অসুস্থতার জেরে মারা যান। তারপরেই মেয়ের মৃত্যু সংবাদ মোবাইলে মা অনিতা দেবীকে দেওয়া হয়। এরপরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা অনিতা দেবী। তিনি পাগলের মত মেয়েকে শেষ বারের জন্য দেখার জন্য ব্যকুল হন। কিন্তু লক ডাউনের জেরে কিভাবে বিহার যাবেন। তাই হোয়াটস অ্যাপে ভিডিও কল করেন তাঁর বাবা দেবানন্দ বিন্দ। মেয়েকে কাটোয়া থেকেই চোখের জলে শেষ বিদায় জানালেন শ্রমিক মা।

মুঙ্গের জেলার প্রচুর মানুষ এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পরিযায়ি শ্রমিক হিসাবে জমির কৃষিকাজের জন্য আসেন। মুঙ্গের জেলার তাঁড়ি গ্রামের বাসিন্দা অনিতাদেবীও গ্রামে তাঁর স্বামী ও ৩ মেয়ে ও এক ছেলেকে রেখে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী ২ ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রামে পেঁয়াজ তোলার কাজে এসেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে তাঁরা কাটোয়া শহরে এসে আটকে পড়েন। তারপর থেকেই এই আটকে পড়া বিহারের শ্রমিকদের শহরের আরএমসি মার্কেটে রাখা হয়েছে।

জানা গিয়েছে, বুদবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিহার থেকে মেয়ের মৃত্যু সংবাদ আসে। কিন্তু মা শেষ পর্যন্ত মেয়ের কাছে যেতে পারলেন না। তাই অঝোরে কাঁদতে থাকেন তিনি। তাঁর সঙ্গীসাথীরা স্বান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। অনিতাদেবী বলেন, আমার মেয়ে বার বার ফোন করে আমাকে ফিরে যেতে বলে। আমার জন্যই আমার মেয়ে মারা গেল। আমি এখান থেকে কীভাবে যাব। কে নিয়ে যাবে। জানেন বাবু, আমার তিনটে মেয়ে। মেয়েদের বিয়ের জন্য টাকা জোগাড় করতে হবে। তাই ওদের গ্রামের বাড়িতে রেখে বাড়তি কিছু রোজগারের আশায় এখানে কাজে এসেছিলাম। আজ কার জন্য পয়সা নিয়ে যাব। যে মেয়েকে জন্ম দিলাম। তার মৃতদেহ একটি বারের জন্যও চোখের দেখা দেখতে পেলাম না। মোবাইলেই মেয়ের মরা মুখ দেখতে হল। আমি মা হয়ে থাকব কী করে। সারাজীবন আমার মেয়েকে তো আর ফেরত পাব না বাবু। লক ডাউন আমার মেয়েকে কেড়ে নিল।

Loading

Leave a Reply