দেশ

করোনা মোকাবিলায় পথ দেখাচ্ছে কেরল।

সমস্ত ভারতবর্ষের যখন করোনা আতঙ্কে কাঁপছে তখনই ভারতবর্ষে প্রথম করোনা ধরা পড়া রাজ্যটি নিজে দিকে করোনার কবল থেকে আস্তে আস্তে বের করে নিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে দেশের প্রথম করোনা আক্রান্ত রাজ্যটিকে মডেল হিসাবে মনে করে তাদের থেকে সব ধরনের পরামর্শ ও সাহায্য চেয়েছেন ৬ টি রাজ্য। এই রাজ্যটি হল কেরল। ইতিমধ্যেই শুধু ভারতবর্ষ নয় বিদেশের বিভিন্ন গবেষণাতেও কেরল মডেলের কথা উঠে আসছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কেরল মডেলকে তুলে ধরছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে কোন যাদু মন্ত্রে নিজেদের এই উচ্চতায় তুলে নিয়ে গেল কেরল? বেশ কয়েকদিন ধরে কেরলে আক্রান্তের সংখ্যা ৮-১০-১৩ মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু রবিবার সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য। শেষ 24 ঘন্টায় আক্রান্তের গ্রাফ সরলরেখায় পরিণত হয়েছে।২৪ মার্চ থেকে লকডাউন কার্যকর হওয়ার পরেও দেশে আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যাও ৩০০ পেরিয়েছে। কেরলের এর অনেক পরে করোনা আক্রান্ত ধরা পড়লেও মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।তামিলনাড়ুতেও আক্রান্তের সংখ্যা যেখানে ১০০০ ছুঁইছুঁই, সেখানে কেরলে আক্রান্তের সংখ্যা এখনও ৫০০-ও পেরোয়নি।


এখনও পর্যন্ত দু’জন প্রাণ হারালেও, সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১২৩ জন। বিভিন্ন রাজ্যে যখন পরীক্ষার কিট নিয়ে অভিযোগের পাহাড় তুলছেন। তখন নিরবে পরীক্ষা করে চলেছে কেরল সরকার।র‌্যাপিড টেস্টিং কিট দিয়েই কাজ চালিয়ে নিয়েছে কেরল সরকার,যার সাহায্যে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ১-২টি উপসর্গ দেখেই রোগের নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে । এর জন্য নিজের সাংসদ তহবিল থেকে রাজ্য সরকারের হাতে ৫৭ লক্ষ টাকা তুলে দেন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরও। সেই টাকার সমস্ত খরচ করা হয়েছে করোনা পরীক্ষা খাতে। চিকিৎসকরা বলছেন প্রথম থেকেই রাজ্য সরকার সুনিপুণভাবে করোনা মোকাবেলায় উদ্যোগী হয়েছেন। যখন সারাদেশে প্রায় কোন রাজ্য ১০ হাজার মানুষের পরীক্ষা করতে পারেনি সেখানে কেরল অনেককেই পরীক্ষা সংখ্যাতেও চমকে দিয়েছে যেখানে উপসর্গ ধরা পড়েছে সেখানে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মানুষকে গৃহবন্দি রেখে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে খাবার থেকে শুরু করে রেশন পর্যন্ত পৌছে দিয়েছে। সারা দেশে যা কিচেন তৈরি হয়েছে তার একটি বড় অংশই কেরলে তৈরি হয়েছে। সবকিছুই হয়েছে দুর্দান্ত সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে।



লকডাউনের জেরে রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করেছে রাজ্য সরকার। সেখানে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। করোনা খাতে ব্যয়ের জন্য ২৬০ কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। আগাম দু’মাসের টাকা জমা করা হয়েছে পেনশনভোগীদের অ্যাকাউন্টেও। ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নেটওয়ার্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার। চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিতে অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। রীতিমতো কাঁচের ঘর তৈরি করে রোগীকে তার বাইরে রেখে চিকিৎসকরা আর্টিফিশিয়াল হাত ব্যবহার করে রোগীদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করছেন। কোন জায়গাতে একজন আক্রান্ত হলে সেই এলাকাকে আলাদা করে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে এই মুহূর্তে ভারতবর্ষ নয় অন্যান্য দেশকেও পথ দেখাতে শুরু করেছে কেরল।


Loading

Leave a Reply